Sunday, April 28, 2024
Homeউত্তর ২৪ পরগনাবাবা অসুস্থ! সংসারের হাল ধরতে টোটো চালাচ্ছে বয়স পনেরোর গায়ত্রী

বাবা অসুস্থ! সংসারের হাল ধরতে টোটো চালাচ্ছে বয়স পনেরোর গায়ত্রী

বাবার অসুস্থতার কারণে সংসারের হাল ধরতেই বাবার টোটো চালাচ্ছেন গাইঘাটার বছর ১৫ এর গায়ত্রী হালদার,জীবন যুদ্ধ হার না মানা এক নাবালিকাছাত্রীর জীবন সংগ্রামের বাস্তব গল্প শুনুন।

টোটো হাতে বছর পনেরোর গায়ত্রী হালদার আজ গাইঘাটা এলাকার সকলের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে। সকাল হলেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। মাঝে কিছুটা সময় স্কুলে পড়াশোনা, তারপর আবারও টোটো নিয়ে যাত্রীদের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ায় কাজ। আর যাত্রী পরিষেবা দিয়ে উপার্জন করা অর্থই এখন চলছে গোটা সংসার। কারণ গত কয়েক বছর আগে পরিবারের একমাত্র রোজগেড়ে বাবা অলক হালদার শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিছানায় শয্যাশাই হয়ে পড়ায়, সংসারের হাল ধরতে জেদ করেই টোটো চালানো শেখা গায়ত্রীর। কোন রকমের টালির চাল দেওয়া বাড়িতে অসুস্থ বাবা, মা ও দিদিকে নিয়ে সংসার গায়েত্রীর। শুধু সংসারের হাল ধরাই নয়, পাশাপাশি দিদির পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে কেও এগিয়ে নিয়ে যেতে বোন হয়ে দিদির পাশে দাঁড়িয়েছে গায়ত্রী। ছোট মেয়ের সংসার চালানোর এই লড়াই দেখে, মা কৃষ্ণা হালদারও আজ এলাকার দুটি বাড়িতে ধরেছেন পরিচারিকার কাজ। এলাকার মানুষও গায়েত্রীর এই লড়াইকে আজ কুর্নিশ জানাচ্ছেন। তবে প্রতিমুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে গায়ত্রীকে এগিয়ে যেতে হয় টোটো নিয়ে। প্রথম অবস্থাতে নানা বিদ্রুপ কটুক্তির শিকার হতে হয়েছে ছোট্ট মেয়েটিকে। তবে তার লড়াই এর কাছে মাথা নত করতে হয়েছে সকলকে, এখন টোটো স্ট্যান্ডের সকলেই এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীরাও সব রকম ভাবে সাহায্য করেন বছর ১৫-র টোটো চালক গায়ত্রী কে। মাঝে কিছুদিনের জন্য টোটো খারাপ হয়ে যাওয়ায়, টোটো স্ট্যান্ডে গায়ত্রীকে দেখা না যেতেই খোঁজ পরে তার। জানা যায় টোটোর ব্যাটারি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণেই সমস্যায় পড়েছে গায়ত্রী। পাড়া প্রতিবেশী টোটো চালকদের সাহায্যে আবারো নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে পুনরায় যাত্রী পরিষেবা দিতে পথে নামে গায়ত্রী। মেয়ের এই লড়াই রীতিমত চোখে জল এনে দিচ্ছে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী বাবা অলক হালদারের। শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে মেয়েকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অলক বাবু। বাবার চিকিৎসা খরচ থেকে শুরু করে দিদির পড়াশোনা এমনকি বাড়ির সকলের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের সমস্ত শখ আহ্লাদ ভুলে আজ সকাল বিকেল টোটো চালিয়েই অর্থ উপার্জন করতে হয় বছরে ১৫ এর এই ছোট্ট মেয়েটিকে। স্থানীয় ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারাও আজ তার পাশে। গায়ত্রী টোটো চালানোর পাশাপাশি করুক পড়াশোনা আর তার জন্যই সর্বতোভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। সকাল বিকেল টোটো চালানোর মাঝেই স্কুলে যায় গায়ত্রী। তবে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপের সুর গায়ত্রী গলায়। ছোট বয়সে গায়ত্রী আজ টোটো চালক। তাই হয়তো ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরা সেভাবে কথা বলে না তার সঙ্গে। তাই স্কুলে আসলেও মানসিকভাবে একাই কাটাতে হয় জীবনযুদ্ধে লড়াই করা বছর ১৫-র গায়ত্রী হালদার কে। যে কথা বলতে গিয়ে রীতিমত চোখের জল চলে আসলো নবম শ্রেণীর এই ছাত্রীর। টোটো নিয়ে রাস্তায় নেমে নানা বিদ্রুপ কটুক্তির শিকার হয়েও আজ যেন জয়ী সে, এমন একদিন আসবে যেদিন বান্ধবীরাও তার এই কষ্টকে কুর্নিশ জানিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে আশা গায়ত্রীর। সরকারিভাবে কোন সাহায্য মেলেনি। গায়ত্রী এখন চায় সরকারি সাহায্য হোক বা যেভাবে হোক বাবাকে সুস্থ করে তুলতে। এত অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরতে কজনই বা পারে! তাই টোটো চালক গায়ত্রী যেন আজ সমাজে লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তবে মানসিকভাবে একা হওয়া গায়ত্রীর শুধু মাত্র বন্ধু আজ এই টোটোই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments