রবিবার দুপুরের খাওয়া-দাওয়া তখনো শেষ হয়নি। কিছুক্ষণ আগেই ছেলের সাথে কথা হয়েছিল টেলিফোনে। দুপুর দুটো বেজে পাঁচ মিনিট খাওয়া-দাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল ঠিক এমন সময়ে বাইরের দরজার সামনে তিনবার বিকট আওয়াজ। গুলির আওয়াজ। আতঙ্কে স্তব্ধ গোটা পরিবার। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় এর গ্রামের বাড়ি জিরান পুর এ। ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে গোটা পরিবার গুটিয়ে নিয়েছে তাদের নিজের বাড়িতেই। সেই সময় বাড়িতে ছিলেন পার্থ প্রতিম রায় এর বৃদ্ধ মা-বাবা, দাদা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যায় পার্থপ্রতিম। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ বাহিনী। উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি গুলির খোল। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
Read More –এবার ‘ভুয়ো পুলিশ’ মেদিনীপুর শহরে!
তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের বাড়িতে ঢুকে গুলি চালালো একদল দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ। কোচবিহারের নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকার জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার্থবাবুর গ্রামের বাড়িতে ছিলেন তাঁর মা, বাবা, দাদা সহ পরিবারের অন্যরা। পার্থবাবু যদিও কোচবিহারে নিজের বাড়ি ও অফিস নিয়েই থাকেন। অভিযোগ অনুযায়ী চার থেকে পাঁচজন গাড়িতে করে এসে হামলা চালালেও গুলিতে পরিবারের কেউ জখম হননি। তবে ফেরার সময় দুষ্কৃতীরা বাড়ির সামনে থাকা একটি বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে আততায়ীরা বলরামপুর এর দিকে পালিয়ে গেছে। ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। ঘটনার খবর পেয়েই বাড়িতে ছুটে যান পার্থবাবু। বাবা-মা সহ অন্যদের খবর নেন তিনি। তিনি বলেন, তিন চারটি গুলির খোলা উদ্ধার হয়েছে বাড়ির ভেতর থেকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে তারা তদন্ত শুরু করেছে। তার বৃদ্ধ মা-বাবা যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় এর গ্রামের বাড়িতে গুলি, তদন্তে পুলিশ।
তবে কে বা কারা এই ঘটনাটি করলো তা নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করেননি পার্থবাবু। বলা বাহুল্য, মাসের প্রথম দিকে কে এল ওর তরফে পার্থপ্রতিম রায় ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে হুমকি মূলক চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই সুবাধে পার্থ প্রতিম রায় এবং বিনয় কৃষ্ণ বর্মন এর সুরক্ষা দ্বিগুণ করেছিল পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু সরাসরি পার্থর উপরে হামলা হয়নি। বাড়ি এবং পরিবারের উপরে এই হামলার ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও বা পরিবারের তরফে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বাড়িতে উপস্থিত সেই সময়ের সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, আক্রমণকারীরা 5 থেকে 6 জন ছিল। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল, দেখা যাচ্ছিল না মুখ।
Read More –নিশীথ প্রামানিক কোন দেশে র নাগরিক? প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিল অসমের রাজ্য সভার কংগ্রেস সাংসদ
কুচবিহার জেলা পুলিশ সুপার কে কান্নান জানিয়েছেন, গুলি চালানোর ঘটনা একটি ঘটেছে, ঘটনাস্থলে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ উপস্থিত রয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পার্থ বাবু বলেন, রাজ্য পুলিশের উপরে আমার যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। অবশ্যই তারা এই আক্রমণের কিনারা করবেন দ্রুত।।
আবার এর পিছনে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগেই বিজেপির কিছু লোকজনকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো নিয়ে জিরানপুরে তৃণমূলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তার জেরেই এই হামলা কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে প্রশাসনিক স্তরে। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায় জানান, চার-পাঁচ জন মিলে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছি। বাড়ির সদস্যরা আতঙ্কিত রয়েছেন। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।