ময়নাগুড়ি, ২৬ শে সেপ্টেম্বর : ময়নাগুড়ির আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বসুনিয়া বাড়িতে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী বধূর সাজে সজ্জিত হয়ে পূজিত হবেন দেবী দুর্গা। বসুনিয়া পরিবারের এই পুজো এবার ২১১ তম বর্ষে। প্রতি বছর জাকজমক পূর্ণ ভাবে মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠলেন এবছর অনেক সতর্কতা অবলম্বন করেই পূজিত হবেন দেবী। পুজোকে কেন্দ্র করে এবছর রাখা হবে বাড়তি সতর্কতা। থাকবে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। ভিড় এড়াতে রাখা হচ্ছে খোলা মেলা প্যান্ডেল। তবে, রাজবংশী বধূ রুপে দেবি দূর্গা দেখতে ইতিমধ্যেই কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দেবী আসেন রাজবংশী বধূরুপে, কখন দেবীর পরনে থাকে রাজবংশী সমাজের ট্রাডিশনাল পোশাক পাটানি, আবার কখন দেবী দুর্গার পরনে থাকে রাজবংশী বধূর সাজ । যেমন পোষাক ঠিক তেমনি রাজবংশী সমাজের ছাপ রয়েছে দেবী দুর্গার গড়ন ও সাজেও। এখানে দেবী দুর্গার পরনে নেই কোনো অলঙ্কার, কারন তিনি গাঁয়ের বধূ। চোখ, নাক ও মুখের গড়নে মিলবে রাজবংশী ঘরের মেয়ের প্রতিচ্ছবি।এবছর রাজবংশী সমাজের ট্রাডিশনাল পোশাক পাটানি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরন করবেন স্থির করেন পুজো কমিটি । কিন্তু করোনার কারণে তা হয়ে ওঠেনি । যে পোশাক দেবীর পরনে পড়ানোর কথা ছিল তা আনতে হয় আসাম থেকে। কিন্তূ এবছর করোনার কারনে তা সম্ভব হয়নি । তাই এবার মাটি দিয়েই শাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তারা।
তবে করোনার কথা মাথায় রেখে বাদ পড়বে অনেক কিছুই। এই পুজোতে প্রতি বছর রাজবংশী ভাষার পত্রিকা ‘উজানী’ প্রকাশিত হয় ।পত্রিকা প্রকাশের সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
বসুনিয়া পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের দেবী আরাধনার ইতিহাস ডুয়ার্সে সবচেয়ে প্রাচীন। ১৮১০ সালে জোতদার ধনবর বসুনিয়া এই পুজোর সূচনা করেন। ওই সময় ময়নাগুড়ি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ধনবর বসুনিয়া তৎকালীন আমগুড়ি এলাকায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।তবে রাজবংশী বধূর আদলে দেবী দূর্গার গড়ন ঠিক করেছিলেন তিনি নিজেই।” শুরুতে এই পুজো ‘যাত্রা পুজো’ নামে কিরাত ভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠে। বংশ পরম্পরায় পূজিত এই দেবীর পুজো করে চলেছেন সুনীল বসুনিয়া। তিনি বলেন, “আমাদের পুজো এবার ২১০তম বর্ষে। করোনার কারনে অনেক কিছুই সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তবে আমাদের রাজবংশী কৃষ্টি মেনেই সমস্ত ধরনের পুজো হবে। প্রতি বছর উজানি পত্রিকার প্রকাশ আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়। এবছর পত্রিকা প্রকাশিত হবে তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে না। এই পূজা আমাদের পারিবারিক পূজা হলেই এখন তা সার্বজনীন হয়েছে।”