Friday, April 26, 2024
Homeজেলাউচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার দিন বাবা'র কফিনবন্দী দেহের সামনে ছাত্রী

উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার দিন বাবা’র কফিনবন্দী দেহের সামনে ছাত্রী

সুদীপ্ত দাস, বারাসাত,২০ই মার্চ :- যুবতীর নাম ভাগ্যশ্রী। কিন্তু ভাগ্য তার সঙ্গ দিলো না এদিন। আচমকা আঁধার নেমে এলো তার জীবনে। যুবতীর উচ্চমাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা ছিল সেদিন। সেদিনই বাবা’র কফিনবন্দি দেহ এলো বাড়িতে। তীব্র শোকের ছায়ায় স্তব্ধ তখন গোটা পরিবার, বাবা’র মুখাগ্নি সেরে কান্না মাখা চোখেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলো যুবতী। যুবতীর পুরো নাম ভাগ্যশ্রী মন্ডল। তাঁর মৃত বাবা’র নাম অনিমেষ মন্ডল। ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরের।

মছলন্দপুর-১ পঞ্চায়েতের বেলেডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি অনিমেষ মন্ডলের (৪৮)। তিনি পেশায় ছিলেন একজন হাতুড়ে ডাক্তার। দীর্ঘদিন ধরেই অনিমেষ রাজস্থানের উদয়পুরে হাতুড়ে ডাক্তারি করেন।বেলেডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে থাকতেন তার স্ত্রী রিনা সহ তাদের দুই মেয়ে ভাবনা এবং ভাগ্যশ্র’কে নিয়ে। ছোট মেয়ে ভাবনা এবছরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। আর ভাগ্যশী এবছরের উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার্থী। মন্ডল পরিবারে অনিমেষই একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ বাইকে করে উদয়পুর গ্রামে এক রোগীর চিকিৎসা করতে যাচ্ছিলেন। অনিমেষ বাইকের পিছনে বসেছিলেন।কিন্তু পথেই অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বাইক থেকে অনিমেষ ছিটকে পড়েন রাস্তায়। হেলমেট না থাকায় গুরুতর চোট লাগে মাথায়। গ্রামের বাসিন্দারাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন অনিমেষকে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষে গত শুক্রবার মৃত্যু হয় পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক অনিমেষ মন্ডলের। দুর্ঘটনার খবর আগেই পেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। শেষে মৃত্যুর খবর পৌছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে।

সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় অনিমেষের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় মছলন্দপুরের বেলেডাঙ্গার বাড়িতে। বাড়ির উঠোনে শায়িত বাবার কফিন জড়িয়ে অঝোরে কাদতে থাকেন বড় মেয়ে ভাগ্যশ্রী।একই অবস্থা অনিমেষের স্ত্রী এবং ছোট মেয়ের।

বড় মেয়ে ভাগ্যশ্রীর এদিন ছিল উচ্চমাধ্যমিকের ইতিহাস পরিক্ষা। পরিক্ষার দিনেই বাড়িতে বাবার কফিনবন্দি দেহ আসে। বাবার দেহ নিয়ে পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে গোবরডাঙ্গা শ্মশানে আসে ভাগ্যশ্রী। বড় মেয়ে হিসেবে ভাগ্যশ্রীকেই মৃত বাবার মুখাগ্নি করতে হয়। মুখাগ্নির পর শ্মশান থেকেই ভাগ্যশ্রী চলে আসেন পরিক্ষাকেন্দ্র চাপরা নেতাজী বালিকা শিক্ষা নিকেতনে। ভাগ্যশ্রী, ভুদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

এদিন সকালেই মৃতের বাড়িতে পৌঁছন তৃণমূল পরিচালিত মছলন্দপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস ঘোষ সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তৃণমূলের প্রধান।

এই প্রসঙ্গে প্রধান তাপস ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যাক্তিগত ভাবেও আমি মৃতের পরিবারের পাশে আছি। মৃতের স্ত্রী রিনা মন্ডল কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। দু-চোখে জল নিয়ে কথা বলেন। সবরকম সহায়তায় আমরা ওনাদের পাশে আছি।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments