ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের তুলনায় পাকিস্তানীদের আগ্রহ বেশি ছিল। কারণ প্রোটিয়া হারলেই পাকিস্তানের সুবিধা হয়ে যেত। সেমিফাইনালে যাওয়ার রাস্তা কিছুটা কন্টকমুক্ত হত। কিন্তু হতাশই হতে হল পাক সমর্থকদের। ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে ২ নম্বর গ্রুপে ৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ১৩৩/৯। জবাবে ২ বল বাকি থাকতে ১৩৭/৫ তুলে ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েও দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে প্রোটিয়ারা। দুরন্ত ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। শেষ ওভারে নাটক জমে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য ৬ বলে দরকার ছিল ৬ রান। ভুবনেশ্বরের প্রথম বলে কোনও রান হয়নি। দ্বিতীয় বলে ১ রান নেন পার্নেল। তৃতীয় বল মিলারের ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হয়ে যায়। চতুর্থ বল বাউন্ডারি হাঁকিকে দলকে কাঙ্খিত জয় এনে দেন মিলার।
লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েন পার্নেলদের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এদিন বড় রানের টার্গেট রাখতে পারেনি ভারত। কম রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে গেলে বোলারদের জ্বলে ওঠা জরুরি। সেটাই করে দেখালেন ভুবনেশ্বর কুমার, অর্শদীপ সিংরা। ভারতের জোরে বোলারদের দাপটে বেসামাল দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার। পাওয়ার প্লে–তে ভারতের ভরসা হয়ে উঠেছেন অর্শদীপ সিং। শুরুতেই দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন এই বাঁহাতি জোরে বোলার। এদিনও নিজের প্রথম ও দলের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য এনে দেন অর্শদীপ। প্রথম বলেই তুলে নেন কুইন্টন ডিকককে (১)। ১ বল পরেই ফেরান রিলে রুসোকে (০)। অর্শদীপের বল তাঁর ভেতরের পায়ে লাগলেও আম্পায়ার আউট দেননি। দীনেশ কার্তিকের পরামর্শে ডিআরএস নেন রোহিত। টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট হন রুসো। এরপর বাভুমাকে (১৫ হলে ১০) তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলে দেন সামি।
শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যান এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। ঝুঁকি নিতে গিয়ে বেশ কয়েকবার রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান এই দুই প্রোটিয়া ব্যাটার। অশ্বিনের বলে একবার মার্করামের ক্যাচ ফেলেন বিরাট কোহলি। শেষ পর্যন্ত ১৬ তম ওভারে জুটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর বলে সূর্যকুমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মার্করাম। ৪১ বলে ৫২ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে দলের চাপ কাটিয়ে দেন। তাঁর ও ডেভিড মিলারের ৭৬ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। ট্রিস্টান স্টাবস (৬) অশ্বিনের বলে আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার জয় আটকায়নি। ২ বল বাকি থাকতে দলকে জয় এনে দেন ডেভিড মিলার। ৪৬ বলে ৫৯ রান করে তিনি অপরাজিত থাকেন। ২৫ রানে ২ উইকেট নেন অর্শদীপ। দুরন্ত বোলিং করে ১৩ রানে ১ উইকেট নেন সামি।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারতও এদিন শুরুতে বিপর্যয়ে পড়েছিল। ভারতের টপ অর্ডারে ধস নামিয়েছিলেন লুঙ্গি এনগিডি। প্রথমে তুলে নেন রোহিত শর্মাকে (১৪ বলে ১৬)। ৪ বল পরেই ফেরান লোকেশ রাহুলকে (১৪ বলে ৯)। এনগিডির বলে পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কাটানোর চেষ্টা করছিলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে যান এনগিডিই। তাঁর শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে লং লেগে রাবাডার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন কোহলি (১১ বলে ১২)। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল বিপর্যয়ে। অক্ষর প্যাটেলের পরিবর্তে প্রথম একাদশে আসা দীপক হুডা (০) সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পরের ওভারেই হার্দিক পান্ডিয়াকে (৩ বলে ২) তুলে নিয়ে ভারতের বাটিংকে কফিনবন্দী করে দেন এনগিডি। হার্দিক আউট হওয়ার পর ভারতে টেনে নিয়ে যায় সূর্যকুমার যাদব। চাপের মুখে দুরন্ত ব্যাটিং সূর্যকুমারের। ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ। দীনেশ কার্তিক (১৫ বলে ৬) ব্যর্থ। শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৬৮ রান করে আউট হন সূর্যকুমার। ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন এনগিডি। ১৫ রানে ৩ উইকেট পার্নেলের।