আজ, মঙ্গলবার এসএসসি মামলা নিয়ে শুনানি। রাজ্যসরকার নিজেদের যুক্তি সাজালো সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি মামলার শুনানিতে। রাজ্যের দাবি, রাজ্য নিয়োগের শূন্যপদ তৈরি করে এবং শূন্যপদে নিয়োগের জন্য এসএসসি-র কাছে পাঠায়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও অনিয়ম থাকলে সেটা নিয়ে এসএসসি বিস্তারিত জানাতে পারবে। রাজ্য অতিরিক্ত শূন্যপদ ৬৮৬১ তৈরি করে, ওয়েটিং লিস্টের যোগ্য বঞ্চিতদের জন্য।
রাজ্যের সওয়াল, এসএসসি মাধ্যমে ওই অতিরিক্ত শূন্যপদের জন্য হাইকোর্টের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। হাইকোর্ট অনুমতি দেয়নি। রাজ্য ওই অতিরিক্ত শূন্যপদে কোনও নিয়োগ করেনি। কেউ অতিরিক্ত শূন্যপদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেনি। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন।
এরপরই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ”রাজ্যকে শূন্যপদ তৈরি করতে হল কেন? ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০২২ সালে অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন তৈরি করা হবে? ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে থাকে, চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে, তাহলে সেই একই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদে পূরণ করার কোনও প্রশ্নই নেই।” প্রধান বিচারপতির আরও প্রশ্ন, ”২০১৬ নিয়োগ প্রক্রিয়া আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলে কীভাবে রাজ্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে?”
রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ” নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০১৬ সালে শুরু হলে নিয়োগ হয় ২০১৮ বা আরও পরে। সেই সময় একাধিক মামলায় রাঙ্ক জাম্প চাকরির তথ্য উঠে আসে। অযোগ্যদের তালিকা থেকে সরিয়ে ওয়েটিং লিস্ট থেকে যোগ্যদের চাকরির প্রসঙ্গ আসে, তখনই রাজ্য প্রস্তাব দেয় অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির এবং তা এসএসসি’র মাধ্যমে হাইকোর্টে অনুমতির জন্য পৌঁছায়। হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। বিষয়টি সমাপ্ত ওখানেই। কারণ রাজ্য অতিরিক্ত শূন্যপদে সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনও নিয়োগ করেনি। হাইকোর্ট এই উদ্যোগের মধ্যে এসএসসি আবেদনকে বেনামি আবেদন বলে, তার মধ্যে ক্রিমিনালিটি খুঁজতে তদন্তের নির্দেশ দেয়।”
কলকাতা হাইকোর্টের জন্য এখন লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারা হয়ে রয়েছে। সোমবার সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ শুনানি ছিল সর্বোচ্চ আদালতে। শুনানি একদিনের জন্য পিছিয়ে যায়। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।গত সোমবার মামলাটির শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। মামলা শুনেই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘প্যানেলের বাইরে নিয়োগ করা হয়েছে। এটা তো সম্পূর্ণ জালিয়াতি।’ ৬ মে, সোমবার ফের শুনানি হওয়ার কথা ছিল এই মামলার।
গত শুনানি তোর সুপ্রিম কোর্টের কড়া পোস্তের মুখে পড়ে এসএসসি। সরকারের আইনজীবী আদালতে প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন হল হাইকোর্ট কীভাবে একজন সরকারি কর্মীকে টার্মিনেট করতে পারে? তাঁরা তো কমপিটেন্ট অথরিটি নয়। ২৪ হাজার মানুষ কর্মহীন হলে তাঁদের পরিবারের কী হবে?’ পাল্টা প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়েছে, এমন অভিযোগ জানার পরেও কী ভাবে সুপার নিউমেরিক পোস্টের অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা? কেন সুপার নিউমেরিক পোস্ট (বাড়তি পদ) তৈরি করা হল?’
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। ওএমআর শিট না পেলে যোগ্য অযোগ্য আলাদা করা যাবে না।সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তে স্থগিতাদেশ দিলেও হাইকোর্টের বাকি রায়ে ওইদিন স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।