মিল্টন সরকার,৩০শে জুন:
আজ ঐতিহাসিক ৩০ শে জুন মহান সাঁওতাল হুল দিবস। সারা রাজ্যের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হল এই হুল দিবস । বুধবার কোচবিহারের দিনহাটা ২নং বিডিও অফিসে হুল দিবস উদযাপন করা হয় । বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সিধু কানুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সকলে। এদিন ব্লক অফিস চত্বরে কোভিদ বিধি মেনে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা ২ নং ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক রশমিদীপ্ত বিশ্বাস, সহ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক মধুরিমা চক্রবর্তী, দিনহাটা ২নং ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বীরেন বর্মন, দিনহাটা ২ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিষ্ণু কুমার সরকার, বিশিষ্ট শিক্ষক সৈকত সরকার সহ আরো অনেকে। হুল দিবসের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এদিন আদিবাসী নৃত্য পরিবেশিত হয়। ব্লক অফিস সূত্রে জানা গেছে কোভিড বিধি মেনেই এদিনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে।
পরের খবর- ফালাকাটা থানার উদ্যোগে সচেতনতা শিবির ও দুঃস্থদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
হুল দিবসের তাৎপর্য জেনে নেওয়া যাক:
৩০ জুন, ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিবস, যা ঐতিহাসিক সাঁওতাল হুল দিবস বা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস নামে পরিচিত। মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের শোষণ-নিপীড়ন এবং ব্রিটিশ পুলিশ-দারোগাদের অত্যাচারে নিষ্পেষিত সাঁওতাল জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ১৮৫৫ সালে সিধু মুরমু ও কানু মুরমু এবং দুই ভাই চান্দ ও ভাইরো ভারতের নিজ গ্রাম ভগনাডিহতে এক বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন।
পরের খবর-৪-২ গোলে জার্মানির কাছে পর্যদুস্ত রোনাল্ডোর পর্তুগাল
সাঁওতাল জনগণ মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের নিপীড়নে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল সে সময়। মহাজনের ঋণের ফাঁদে পড়তে হতো বংশপরম্পরায়। স্ত্রী-পুত্ররা মহাজনের সম্পত্তি হয়ে পড়ত। পুলিশের সহায়তায় তাদের গবাদিপশু ও জমি কেড়ে নেওয়া হতো। প্রতিবাদ করলে পাল্টা গ্রেপ্তারের শিকার হতো; এমনকি সে সময় ব্রিটিশ সরকারের উল্টো খড়্গ নেমে আসত তাদের ওপর। ১৮৫৫ সালেই যে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা তা নয়, এর আরও ৭৫ বছর আগে ১৭৮০ সালে সাঁওতাল জননেতা তিলকা মুরমুর (যিনি তিলকা মাঞ্জহী নামে পরিচিত) নেতৃত্বে শোষকদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল গণসংগ্রামের সূচনা হয়। তিনি সর্বপ্রথম সাঁওতাল মুক্তিবাহিনী গঠনের মাধ্যমে পাঁচ বছর ধরে ইংরেজ শাষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালান।
সাহেবগঞ্জ বিডিও অফিসে হুল দিবস উদযাপন
পরের খবর-দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তানিশা অবশেষে ভ্যাকসিন পেল
১৭৮৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তাঁর তিরের আঘাতেই ভাগলপুরের ক্লিভল্যান্ড প্রাণ হারান। ১৭৮৫ সালে তিলকা মাঞ্জহী ধরা পড়েন এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয় । পরবর্তী সময়ে ১৮১১ সালে বিভিন্ন সাঁওতাল নেতার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। এরপর ১৮২০ সালে তৃতীয়বার এবং ১৮৩১ সালে চতুর্থবার সাঁওতাল গণসংগ্রাম গড়ে ওঠে। অবশেষে শোষণহীন স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ৩০ হাজারেরও অধিক সাঁওতালকে নিয়ে সমাবেশ এবং কলকাতা অভিমুখে প্রথম গণযাত্রা করেন বীর সিধু-কানুরা।