কোচবিহার::
কোচবিহার রাসেরমেলার অন্যতম আকর্ষণ টম টম গাড়ি।
কোচবিহার মদনমোহন বাড়ির রাসমেলায় ঘুরতে এসে হাতে টমটম গাড়ি না নিয়ে ফিরে যায় এরকম শিশুর দেখা পাওয়া যায় খুবই কম। মেলায় ঘুরতে আসা একদম কচিকাঁচা থেকে মোটামুটি ১০-১২ বছরের বাচ্চাদেরও টমটম গাড়ি চাই ই চাই। যদিও বর্তমান সমাজে বাচ্চাদের হাতে ইলেকট্রনিক গেমস, মোবাইল বিভিন্ন রকমের দামি খেলনা দেখা যায়। তবুও কোচবিহারের রাস মেলার অন্যতম আকর্ষণ টমটম গাড়ি আজও বাচ্চাদের আকর্ষিত করে। টমটম গাড়ি কোচবিহার রাস মেলার প্রাচীন একটি ঐতিহ্য। মেলা হবে অথচ টমটম বাড়ি থাকবে না, এরকম টা এখনো পর্যন্ত হয়নি। ২১০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার মদনমোহন বাড়ির রাস মেলায় টমটম গাড়ি আজও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এক পয়সা থেকে শুরু হয়ে এখন টমটম গাড়ির দাম কুড়ি টাকা, আজ থেকে কোচবিহারে শুরু হচ্ছে রাস মেলা। তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্য সবকিছুর পাশাপাশি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই টমটম গাড়ি।
বংশপরম্পরায় টমটম গাড়ির ব্যবসা নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই কোচবিহার রাসমেলায় হাজির হন টমটম গাড়ি বিক্রেতারা। নিজের হাতে তারা মাটি, সুতো, বাঁশ,বেলুন,প্লাস্টিক ইত্যাদি সামগ্রী দিয়ে তৈরি করেন এই টমটম গাড়ি। কেউ এসেছেন বিহারের কিশানগঞ্জ থেকে আবার কেউ এসেছেন বিহারের অন্য কোন প্রান্ত থেকে। এই টমটম গাড়ি বিক্রেতারা সকলেই বাবা বা দাদুর এই ব্যবসা করে চলেছেন। বর্তমানের টমটম বিক্রেতারা জানান তারা সকলেই প্রায় বাবা, দাদাদের হাত ধরে কোচবিহারের এই রাস মেলায় ছোটবেলা থেকেই আসছেন। তারা ছাড়া এই টমটম গাড়ি আর কেউ বানাতে পারে না। তারা সকলেই নিজেদের পৈত্রিক এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
কিশানগন্ঞ্জের ধরমগঞ্জ থেকে আসা টমটম গাড়ি বিক্রেতা সাহেব দাস জানান, “আমি গত আঠারো বছর ধরে প্রত্যেক বছর এই রাস মেলায় টমটম গাড়ি নিয়ে আসছি। এর আগে আমার বাবা প্রায় ৫০ বছর এখানে ব্যবসা করে গেছেন। বাবার হাত ধরেই এই ব্যবসায় এসেছি। বর্তমানে টমটম গাড়ির চাহিদা আগের তুলনায় একটু কমে গেছে”। বিহারের ওপর টমটম গাড়ি বিক্রেতা মোহাম্মদ আজমল জানান, “আমি আমার দশ বছর বয়স থেকে কোচবিহারের এই রাস মেলায় টমটম গাড়ি বিক্রি করে আসছি। আমার বাবা দাদুরাও এই একই ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। আমরা নিজেরাই গাড়ি তৈরি করে নিজেরাই বিক্রি করি। কুড়ি টাকা করে বর্তমানে একটি টমটম গাড়ি বিক্রি হয়। লাভ আমাদের খুব একটা হয় না। তবুও বংশ পরম্পরায় প্রতি বছরই টমটম গাড়ির পসরা নিয়ে আমরা কোচবিহার মদনমোহন বাড়ির রাস মেলায় হাজির হই”।