পানের দাম আকাশ ছোয়া – চিন্তায় পরেছে কোচবিহারের পান ব্যবসায়ী থেকে সাধারন পান প্রেমী রা ঃ কোচবিহার
বিয়ে, শুভো অনুষ্ঠান কিংবা শেষ পাতে বাঙ্গালী দের মধ্যে পানের চল মারাত্মক, গৃহস্থ বাড়িতে পানের ডাবর না থাকলে নাকি সংসার সুখের হয় না… তাই পানের চাহিদা শুধু কোচবিহার নয় গোটা বাংলা , আসাম জুরে ব্যাপক। কিন্তু বিগত ১ মাস থেকে পানের বাজারে আগুন লাগাতে ডাবর প্রায় ফাকাই থাকছে গৃহস্থ দের। এমন কি পানের দোকানেও বিশেষ ভির নেই। পান প্রেমী গজেন পাল জানাচ্ছেন দিনে অন্তত ৫/৬ টা পান খেতাম, এখন পান কিনতেই হিমশিম খাচ্ছি। কেনো এই হাল…? কি বলছেন ব্যবসায়ী রা…?
কোচবিহার ভবানীগঞ্জ বাজারে ১১৫ টির মত পানের পাইকারি ও খুচড়া দোকান আছে। গোটা শহরে এই এলাকা থেকেই পান রপ্তানী করা হয়। সেই বাজারের ব্যবসায়ী শান্তি পাল ও বাপি সাহা জানাচ্ছেন জেলায় মূলত তিন টি ভিন্ন প্রজাতির পান বিক্রি হয়। কালী বাংলা, লোকাল পান ও মিঠাপাতা। এই পান আশে সুন্দোরবন কাকদ্বীপ, জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি ও মালদার কিছু এলাকা থেকে। আর লোকাল পান টা পাওয়া যায় দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, কোচবিহার ২নং ব্লক ও তুফানগঞ্জের কিছু এলাকা থেকে। কালী বাংলা পান বিক্রি হয় ৫৫০০ টাকা থেকে ৫৮০০ টাকা প্রতি ১০০০ পিস এ। স্থানিয় পান ৬৫ টা ১৩০ টাকা। আর মিঠাপাতা ১০০ পাতা ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এই দাম টা ১ মাস আগেও এতটা ছিল না। কালী বাংলা ছিল ৩০০০ টাকা, লোকাল ছিল ৯০ টাকা আর মিঠাপাতা ছিল ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। বছরের এই সময়ে দাম একটু চড়া থাকে ঠিক কিন্তু এই বছরের মত চড়া দাম আগে কখনো হয় নি।ব্যবসায়ী সুদীপ দাস ঝানাচ্ছেন – পান কি বেচবো… বিয়ে বাড়িতে পানের বদলে পাস পাস চলে। পান পচে গোডাউনে।ব্যবসায়ী দের কথায় জোগান এতটাই কম আর চাহিদা এতটাই বেশি তাই পানের দামে নজর পরেছে আড়তদার দের। খুচড়া পান দোকানের মালিক রাজেশ দাস জানান – বানিয়ে মিঠাপাতা ২০ টাকা র নিচে বিক্রি করতে পারছি না, এতে কাস্টোমার পান খাচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে।
কার্তিক অঘ্রায়ন মাসে চাষ শুরু হয়, প্রথমে মাটি দিয়ে চাষের জায়গা উচু করে নিতে হয়, সাধারন মাটি নয়, উন্নত মানের এটেল মাটি। কোচবিহারে এই মাটি আসে ভিন জেলা থেকে। আবার আসাম থেকেও মাটি নিয়ে আসেন চাষী রা। চাষের পুরো এলাকাটা ছাউনি দেওয়া হয় বাঁশ, পাটকাঠি, বাতা দিয়ে, এমন কি ওপরেও ঢাকা দেওয়া হয়, এই বাশের ফাক দিয়ে সামান্য আলো প্রবেশ করে, এই পরিবেশ টাই আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। এটি একটি দির্ঘ্য মেয়াদী চাষ, বিঘা প্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম তিন বছর এর থেকে বিশেষ লাভ হয় না, তার পর থেকে লাভ হয়। ঠিক মত পরিচর্জা করতে পারলে ১০বছরের বেশি সময় লাভ পাওয়া যায়। পান চাষের সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় বন্যা ও খরায়। এই দুই মরশুমে পান গাছের যত্ন ঠিক না হলে গাছ মড়ে যায়। ফলনের ওপরে নির্ভর করে বাজার মূল্যে তারতম্য ঘটে পানের। আবার পানের মান ও নির্ভর করে। কোচবিহারের পান চাষে ব্যবহার হয় না রাসায়নিক সার জানালেন কৃষক অরুপ দাস।
কোচবিহারের স্থানিয় বাসিন্দা বিপ্লব বিশ্বাস জানান – বাড়ির ৮ জন সদশ্য সকলেই পান প্রেমী। দিনে অনন্ত এক এক জনের ৫ টা করে পান লাগে। চড়া বাজারে পকেট ফাকা হওয়ার জোগার। পান খাবো না ভাত খাবো…