বহু বহু বছর ধরেই বাংলার বুকে বিশ্বকর্মা পুজো হওয়ার সময় আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে। ১৮৫০ সাল থেকেই বলা চলে বঙ্গদেশে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। তখনকার দিনের বেশ কিছু ধনী ব্যক্তি নিজের অর্থ-প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য ঘুড়ির সঙ্গে টাকা বেঁধে আকাশে ওড়াতেন। এমনও শোনা যায় অনেক রাজা জমিদার নাকি, টাকা জুড়ে আস্ত ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে ছাড়তেও কার্পণ্য বোধ করতেন না।
কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোতেই কেন আকাশে ঘুড়ি ওড়ে, এই প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন? আমরা প্রায়ই ধর্মীয় বইয়ের পাতায় ছবি অথবা টেলিভিশনের পর্দায় কোনও দেবলোক কেন্দ্রিক সিরিয়াল দেখতে গিয়ে দেখেছি, দেবতারা অপূর্ব কারুকার্যময় রথে করে আকাশপথে উড়ে যাচ্ছেন। জেনে রাখা ভালো, বিশ্বকর্মা দেবতাদের আকাশ-রথেরও প্রস্তুতকারক ছিলেন। এছাড়াও দেবতাদের হাতে থাকে অস্ত্রগুলিও তাঁরই সৃষ্টি। বলা চলে বিশ্বকর্মা এই উড়ন্ত রথকে স্মরণ করতেই, তাঁর পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। প্রকৌশলীদের দেবতা হিসাবে বিশ্বকর্মার পুজো প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ হয়। শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, বিল্ডার,কারিগরদের কাছে এ’ হল এক বিশেষ দিন। যেইসব জায়গাতেই যন্ত্র-কারিগরির কাজ হয় সেখানেই বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আকাশে ঘুড়ির লড়াই বাঁধে। কান পাতলেই শোনা যায় ‘ভো-কাট্টা’ আওয়াজ। এদিন আকাশ ভরে ওঠে রংবেরঙের ঘুড়িতে।
বিশ্বকর্মা পুজো মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতেই বেশি লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ‘কন্যা সংক্রান্তি’-র দিনে এই বিশ্বকর্মা পুজো পালন করা হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বকর্মা পূজিত হন। দেখা গিয়েছে মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ওড়িশা এবং ত্রিপুরায় এই উৎসব পালন করা হয়।