ইন্দিরা গান্ধী যখন স্বমহিমায় নয়াদিল্লিতে বিরাজ করছেন, তখন যে কজন রাজনীতিবিদ বুক চিতিয়ে ইন্দিরা-সঞ্জয় গান্ধীর অপশাসনের বিরুদ্ধ লড়ে চলেছেন, তাঁর মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। ইন্দিরার ‘রাজতন্ত্র‘ হটাতে গিয়ে অবশ্য শেষমেশ উত্তরপ্রদেশে ‘যাদব পরিবারতন্ত্র‘ স্থাপন করে গিয়েছেন।
মুলায়ম প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন ১৯৮৯ সালে। ১৯৯০ সালে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংয়ের সরকার পতনের পর মুলায়ম চন্দ্রশেখরের জনতা দলের (সমাজবাদী) সঙ্গে হাত মেলান এবং রাজ্যে তাঁর সরকার টিকিয়ে রাখেন। তখন তিনি কংগ্রেসের সমর্থন নিতে কার্পণ্য বোধ করেননি। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস রাজধানীতে চন্দ্রশেখর এবং উত্তরপ্রদেশে মুলায়মের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দুই সরকারই পড়ে যায়। ওই বছরেই বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় ঘটে মুলায়মের এবং সরকারে আসে বিজেপি।
১৯৯২ সাল। মুলায়ম নিজের দল গড়লেন, যার নাম দিলেন সমাজবাদী পার্টি। এবার বিজেপিকে ঠেকাতে কাঁসিরাম-মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে ভোট সমঝোতা করলেন মুলায়ম। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ফের কংগ্রেস এবং জনতা দলের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হন। পৃথক রাজ্য উত্তরাখণ্ড গঠন নিয়ে তাঁর অবস্থান ঘৃতাহুতি দেয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। অবশ্য সে যাত্রা তিনি বেঁচে গেলেও ‘৯৫ সাল পর্যন্ত চেয়ার টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হন।
২০০২ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং সপার জাতশত্রু বসপা জোট বেঁধে সরকার গঠন করে। দলিত নেত্রী মায়াবতীকে মুখ্যমন্ত্রী করে মিলিজুলি সরকার গঠিত হয়। পরের বছরই বিজেপি সেই সরকারকে ফেলে দেয়। বসপার বিক্ষুব্ধ নেতারা বেরিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মুলায়মকে সমর্থন দেন।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নেতাজি। একইসঙ্গে দিল্লির রাজনীতির নৌকা অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখলেও ২০০৭ সালে তাঁর দল বিএসপির কাছে গোহারা হেরে যায়। ৩ বারের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়াও মুলায়ম ১০ বারের বিধায়ক ও ৭ বারের লোকসভা সদস্য ছিলেন। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রীও হয়েছিলেন সংযুক্ত মোর্চা সরকারে।
ঘনিষ্ঠজনেরা জানেন, মুলায়মের ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল একবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার। কিন্তু, তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশ্মমায় যে পালটি খাওয়ার জিন লুকিয়ে ছিল, তাতে কারও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি মুলায়ম। উত্তরপ্রদেশের যাদব ও মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক একসময় তাঁর দু পকেটে থাকলেও রাজধানীতে তিনি ছিলেন ভোলবদলের পণ্ডিতমশাই। একেবারে শেষের দিকে রাষ্ট্রপতি ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও তা পূরণ হয়নি। লখনউ থেকে সাইকেল চালিয়ে রাইসিনা হিলে ঢোকার সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয়নি ভারতীয় রাজনীতিতে কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব মুলায়ম সিং যাদবের।