প্রয়াতঃ বলিউড সঙ্গীতশিল্পী কেকে কে নিয়ে এবার মুখ খুললেন এবং দুঃখ প্রকাশ করলেন বিতর্কিত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী।
আমার সংগীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। যেখানে ওড়িশায় বসে করা একটা ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক ,দুৰ্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিস। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রী-র ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশে-বিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাঁদের আবেগ অনুভব করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানান স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানতো ? এত ঘৃণা! এত আক্রোশ! এত বিরুদ্ধতা –কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।
এবার এই যাবতীয় বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং গায়ক রূপঙ্কর বাগচী। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে এই গায়ক। তিনি বলেন, “আমার একটি লাইভ ভিডিয়ো গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক, দুর্ভাবনা, নিপীড়নের দিকে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার বাড়ির বাইরে পাহাড়া দেবে টালা থানার পুলিশ। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রীর ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশে বিদেশে বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, স্বীকৃতি পেয়েছি। মুহূর্তের অসতর্কতা এই রকম গনগনে এবং মারমুখি আবেগ বয়ে আনবে কে জানত তা! এত ঘৃণা, এত আক্রোশ। এটা অনেকটাই তৈরি হয়েছে আমি আমার বক্তব্য গুছিয়ে বলতে না পারার কারণে।”
এদিন তিনি বলেন, “KK-র পরিবারের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করছি।” এদিন গায়কের ভক্ত এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানালেও একবারও লাইভ ভিডিয়োর জন্য ক্ষমা চাননি তিনি। এদিন সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই রূপঙ্কর জানান, তিনি KK-র মৃত্যুর দিন করা লাইভ ভিডিয়ো ডিলিট করেছেন। এদিন তিনি আরও বলেন, “ KK-র জন্য কোনও বিদ্বেষ নেই। আমি আসলে তাঁর শো নিয়ে উন্মাদনা প্রসঙ্গে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একইরকম উৎসাহ দেখান। শিল্পী হিসেবে অনেক ভালোবাসা আমি পেয়েছি। ব্যক্তিগত কোনও হতাশা আমার নেই। বাঙালি গায়ক হিসেবেরয়েছে সমষ্টিগত বিপন্নতা। এখন আরও বেশি করে মনে হয় দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারত নিজেদের গায়কদের স্বার্থ রক্ষায় যেভাবে একজোট হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমরা তা করতে বেশ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ। আমি একার কথা বলতে চাইনি। একটি সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলা। তাই কয়েকজন সমযোদ্ধার নাম নিয়েছিলাম। পরে মনে হয়েছে নামগুলো নেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত ছিল। KK-র মতো ভারতবিখ্যাত পারফর্মারের নামটা নিছক উপলক্ষ্য ছিল, লক্ষ্য কখনওই তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও ওঠেনা। কে জানত KK-র জন্য এই দুর্ঘটনা ওঁত পেতে রয়েছে। গান করতে এসে যেভাবে তিনি প্রাণ হারালেন তা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক।” এদিনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওঁর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একইরকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতে যেভাবে তারা শিল্পীদের স্বার্থরক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে ,আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প -সাহিত্য -সংগীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি।একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম।