উৎক্ষেপণের পর থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছিল ইসরোর এই মহাকাশ যান। ধীরে ধীরে পৃথিবীর থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে কক্ষপথে উঁচুতে উঠছিল চন্দ্রযান। আর গতকাল সোমবার রাতে পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে এবার চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে রওনা হল চন্দ্রযান-৩ । এরপর চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে করতে সেটি অবতরণ করবে চাঁদে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই এই মহাকাশযানটি চাঁদের মাটি স্পর্শ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দুপুর ২ টো ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশ শ্রীহরিকোটা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে এলভিএম৩-এম৪ রকেটের পিঠে চেপে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয় চন্দ্রযান ৩। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৩ অগস্ট বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে ভারত। উল্লেখ্য, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হল প্রায় ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছাতে ৪২ দিন মতো লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। সেই পথেই এগোচ্ছে চন্দ্রযান ৩।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার এবং রোভার। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা এই মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা।
জানা গিয়েছে, চাঁদের কাছে গেলে বিভিন্ন ধাপে চন্দ্রযানের গতি কমানো হবে চন্দ্রযান ৩-এর। মহাকাশযানটি যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন বন্ধ হবে প্রোপালশন মডিউলের ইঞ্জিন। এরপর ‘বিক্রমের’ মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নামবে ‘প্রজ্ঞান’। চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে পালকের মতো করে নীচের দিকে নামবে বিক্রম। এর জন্য লাগবে মোট ২০ মিনিট। বিক্রম চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান।
এদিকে এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সবথেকে কাছে অবতরণ করেছিল নাসার সার্ভেয়ার-৭। ১৯৬৮ সালে সেদিন ৪০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কাছে অবতরণ করেছিল নাসার মহাকাশযান। জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান ৩-এর রোভার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ঘুরে-বেড়িয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং দাবি করেছেন, চাঁদ আদৌ মানুষের বসবাসযোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ৩-এর রোভার।
এর আগে চন্দ্রযান ২-এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করেছিল ভারত। সেবারে অল্পের জন্য দক্ষিণ মেরুতে ঠিক ভাবে অবতরণ করতে পারেনি ইসরোর মহাকাশযান। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, চন্দ্রযান ২-কে কোনওরকম ব্যর্থ বলা যায় না। কারণ ওই মিশনের ৯০ শতাংশ লক্ষ্যই পূরণ হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে গিয়ে মহাকাশযানটি ধ্বংস হলেও চাঁদের থেকে অনেক তথ্য এই মিশনের থেকে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এবার চন্দ্রযান-৩ মিশনে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।
ছবি সৌজন্যে: ISRO Twitter