ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসতেই প্রকাশ্যে এসেছে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের বিতর্কিত তালিকা। তালিকায় দেখা যাচ্ছে, নিয়োগ হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের তিনজন বহিরাগত হলেও বাকিরা ডায়মন্ড হারবার এলাকার বাসিন্দা এবং তাদের অধিকাংশই আগে থেকে পুরসভার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাহলে কিভাবে স্বচ্ছ নিয়োগ হয়েছে, প্রশ্ন ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ড হারবারে। তবে বিরোধী সিপিএম ও বিজেপি এই নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে সুর চড়িয়ে শাসকদলকে বিঁধেছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৬-১৭ সালে ২২টি শূণ্য পদে নিয়োগের জন্য অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজোনকে প্রশ্ন তৈরী থেকে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার পুরসভার পক্ষ থেকে। তবে শেষমেশ নিয়োগ হয়েছিল ১৭ জনের। কিন্তু একজন চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছিল ১৬তে। এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ডায়মন্ড হারবার জনকল্যাণ সমিতি। এই সমিতির পক্ষ থেকে সেইসময় দুর্নীতি নিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। এলাকায় পোস্টার দেওয়া হয়েছিল। এই সমিতির পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর, পুরসভার চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আহ্বায়ক দেবাশিস চৌধুরি। সমিতির পক্ষ থেকে নিয়োগ নিয়ে পুরসভার কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে ( আরটিআই) করা হয়েছিল। তবে পুরসভা নিরীহ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। আসল তথ্যগুলি এড়িয়ে যায় পুরসভা। এরপর ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন দেবাশিসবাবু। তবে সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। নতুন করে ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্ন ওঠায় সুবিচারের আশা করছেন দেবাশিসবাবু। এদিন দেবাশিসবাবু বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে এই নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক দপ্তরে চিঠি করি। কিন্তু কোন সদুত্তর মেলেনি। এই নিয়োগে পুরসভার কর্মী বাসুদেব হালদার সরাসরি জড়িত। এই বাসুদেব একসময় পুরসভার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। পরে ২০১৭ সালে স্থায়ী পিওন পদে নিয়োগ পান। কিন্তু বাসুদেব পুরো দুর্নীতির কিংপিন ছিলেন। পুরসভার আরও রাঘববোয়ালরা ছিলেন।’ বাসুদেব হালদার পিওন পদে চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই চেয়ারম্যানের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছেন। এখনোও সেই পদে বহাল রয়েছেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শাসকদল ঘনিষ্ঠ বাসুদেব। তবে বাসুদেব সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনেক পোষ্টার, লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমি পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলাম। আমি কোন আধিকারিকের ঘনিষ্ট ছিলাম না।’ যদিও ডায়মন্ড হারবার পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেন, ‘আমার কিছু জানা নেই। ইডি তদন্ত করলে সবরকম সহযোগিতা করব।’