১৩ ডিসেম্বর,মিল্টন সরকার,কোচবিহার::
গরমের সময় এসির ব্যবহার থাকলেও শীতল পাটির সুখ মন জুড়িয়ে দেয়। সময়টা এখন শীতকাল হলেও আগাম বছরে গ্রীষ্মকালীন সময়ের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে এখন থেকেই। চলছে প্রতিদিনের রুটিনে জোর কদমে কাজ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “ওরা কাজ করে”।
যাদের কথা বলছি তারা হলেন কোচবিহার জেলার ধলুয়াবাড়ি এলাকার পাটি শিল্পীরা। জেলা জুড়ে প্রায় ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ পাটি শিল্পীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে এই ধলুয়াবাড়ি হল কোচবিহারের পাটি শিল্পীদের পিঠস্থান।
কোচবিহার জেলার এক এবং দুই নম্বর ব্লক, তুফানগঞ্জ ১ এবং ২ নাম্বার ব্লক,মাথাভাঙ্গার কিছু অংশ এবং দিনহাটা দুই নম্বর ব্লকেও হাজার হাজার মানুষ এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মূলত এই কাজের প্রধান উপকরণ বেত গাছ। যার কান্ড থেকে ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে তা দিয়েই চলে কারুকাজ। পাটির আকারের ওপর নির্ভর করে পাটির বৈচিত্র্য। একটি পাটি দু থেকে তিনদিন এমনকি চার-পাঁচ দিনও লেগে যায়। আমরা শীতল পাটির সঙ্গে খুবই পরিচিত থাকলেও ভুসনাই পাটি, ডাল পাটি, বুকার পাটি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পাটি রয়েছে। তবে পাটির পাশাপাশি নানান রকম উপকরণ যেমন পাটি দিয়ে তৈরি ব্যাগ, জুতো, টুপি সহ ঘর সাজানোর নানান উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে। এক কথায় বলা গেলে, পাটি শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে,এসেছে নতুনত্ব।
সময়ের সাথে সাথে পাটির চাহিদা বাড়ছে। অনুকূল পরিবেশে বেত গাছ বড় হয়ে ওঠা এবং বহু মানুষের এই কাজে লিপ্ত থাকার দরুন দিনের পর দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। জেলার বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এই পাটি। অবশ্যই পাটির গুণগত মান এই স্থান ধরে রেখেছে। দক্ষিণবঙ্গ তথা কলকাতার বহু মানুষ কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ির এই পাটির কদর জানেন। পাটির পাশাপাশি নানান উপকরণের ওপর তাদের নজর থাকে আলাদা।
বংশপরম্পরায় বহু পরিবার এই কাজ করে আসছেন। ধলুয়াবাড়ির বাসিন্দা প্রদীপ চন্দ্র ধর মাত্র ৭ বছর বয়সেই এই পাটির কাজ শিখেছেন, তখন থেকেই তিনি এই কাজ করে আসছেন। এখন বর্তমানে তার স্ত্রী এবং মেয়ে এই কাজ করেন। হস্তশিল্পী বহু পুরস্কারও পেয়েছেন তারা। এমনকি দেশ বিদেশেও তাদের শীতল পাটি রপ্তানি হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, বংশপরম্পরায় এই কাজ ধরে দেখেছি যার মজাই আলাদা। বেশ ভালই চাহিদা রয়েছে। তবে বেশ কিছু লোক বাইরে থেকে রেডিমেড পাটি কিনে এনে বাজারে বিক্রি করায় তাদের সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কোচবিহার ১ নং ব্লকের বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহিলারা বেশ ভালো কাজ করছেন। তাদের সুবিধার্থে দ্রুত অনলাইনে শীতলপাটি বিক্রির বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, তাতে তারা আরো উপকৃত হবেন।