বহু প্রতিক্ষিত “বই-গ্রাম”-এর শুভ সূচনা হলো আলিপুরদুয়ারের পানিঝোড়ায়। সূচনা করলেন আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক ভিমলা রঙ্গনাথন। দেশের প্রায় ২৯ হাজার বইপ্রেমি মানুষের সাড়া পাওয়ায় খুশি উদ্যোক্তারা। বইপ্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে দাবী উদ্যোক্তাদের।
আলিপুরদুয়ার :- আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের জনজাতি অধ্যুষিত রাজাভাতখাওয়ার পানিঝোড়া গ্রাম। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে এই গ্রামকেই “বইগ্রাম” রুপে শুভ সূচনা করলে আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক ভিমলা রঙ্গনাথন।
জানাযায়, “আপনকথা” নামে একটি সংগঠন এবং আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়, এই বই গ্রামের ভাবনা । এর আগে মহারাষ্ট্রের ভিলার ও কেরলের পেরুকালেম ছাড়া এমন উদ্যোগ বিশেষ দেখা যায়নি ৷ ফলে, রাজ্যে এই প্রথম বই-গ্রামের সূচনায় বইপ্রেমী মানুষের উপস্থিতি এবং উৎসাহ, উদ্দিপনাটা ছিল একটু বেশিই ।
আলিপুরদুয়ার শহর থেকে রাজাভাতখাওয়ার মাঝে প্রায় ১২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত বক্সা জঙ্গলের মাঝে এই পানিঝোড়া গ্রামের বই গ্রাম। গ্রামের একমাত্র বাস স্ট্যান্ডকেও সাজানো হয়েছে সেই আঙ্গিকেই। গ্রামে ছোটো ছোটো ভ্রাম্যমান ১৫ টি গ্রন্থাগার থাকছে বিভিন্ন বাড়িতে । যেগুলো দেখভাল করবে খুদে পড়ুয়ারাই। পাশাপাশি একটি প্রধান উন্মুক্ত গ্রন্থাগার তৈরি করা হয়েছে । এছাড়া গোটা গ্রামকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বই ও সামাজিক বার্তামূলক চিত্রকলায়। যাতে আকৃষ্ট হয় শিশু পড়ুয়ারাও।
যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় শিক্ষকমহল থেকে শিক্ষাবিদরাও।
আলিপুরদুয়ার শহর থেকে রাজাভাতখাওয়া যাবার পথে ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পানিঝোড়া গ্রাম। ছোট্ট এই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৩২০ জন ৷ পরিবার রয়েছে মাত্র ৭২টি ৷ ছাত্রছাত্রী রয়েছে মোট ৭০-৮০ জন। গ্রামের মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যার পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪২ জন। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এই গ্রামের মানুষের রোজগার অনেকটাই নির্ভর জঙ্গল আর দিন-মজুরিতে।
গ্রামে ঢুকতেই আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। গ্রামে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে একটি তোরণ। বইকে থিম হিসেবে কাঠের তৈরি গাছের আদলে সেই তোরণ। সেখানে বইয়ের রেপ্লিকা ও ছোট লাইব্রেরির রেপ্লিকা । কাঠের তৈরি তোরণ পেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বইগ্রামের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বানানো একটা ফলক। গ্রামে ঢুকলেই বাড়ি বাড়ি পেয়ে যাবেন গ্রন্থাগার।
শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক আর বিমলা, অতিরিক্ত জেলাশাসক নৃপেণ সিং,আপন কথার সভাপতি প্রমোদ নাথ, সম্পাদক পার্থ সাহা,প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা শিক্ষা আধিকারিক জিতেন্দ্র তামাং, স্থানীয় ফ্রান্সিস টোপ্পো সহ আরো অনেকেই।
সম্ভবত ভারতবর্ষের তৃতীয় এবং রাজ্যে প্রথম বই গ্রাম তৈরি হলো পানিঝোড়াতে। যা সাধারণ মানুষ তো বটেই ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রাম ৷