প্রায় চার দশক আগের কথা। প্রথম দর্শনেই মন দেওয়া-নেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। সারাজীবন একত্রে থাকার অঙ্গীকারও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিষয়টি অত সহজ ছিলনা। কেননা তাঁরা দুজনেই ছিলেন বিবাহিত। কিন্তু তাতে কী ? ওই যে কথায় বলে, যাঁর সঙ্গে যাঁর মজে মন। হয়েছিলও ঠিক তাই। প্রেমের টানে স্বামী-পুত্রকে ছাড়তে দু’বারও ভাবেননি রাজমতি বর্মন। সংসার পেতেছিলেন বিবাহিত প্রেমিক গুরুদয়াল বর্মনের সঙ্গে।
পরবর্তীতে প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও মেয়েকে আলাদা বাড়িতে রেখে প্রেমিকাকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধেন গুরুদয়াল। সংসারে স্বচ্ছলতা না থাকলেও তাঁদের ভালোবাসায় কোনও খাদ ছিলনা। তাই একে অপরের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে কাটিয়ে দেন একে একে ৪০টি বসন্ত। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও ভালোবাসার মন্দিরে কোনও ফাঁকফোকর রাখতে চাননি ৬৯ বছরের গুরুদয়াল ও ৫৯ বছরের রাজমতি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। রবিবার রাতে শুভলগ্নে নতুন করে শুভদৃষ্টি হল তাঁদের। নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাক্ষী রেখে শাস্ত্রমতে ধুমধাম করে ছাঁদনাতলায় মালা বদল হল এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। অভিনব এই বিয়ের ঘটনায় কৌতুহল ছড়িয়েছে মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কানফাটায়। প্রীতিভোজের আয়োজনেও খামতি ছিলনা। মাছ-মাংস সহকারে রসনাতৃপ্তি করে খেয়েছেন আমন্ত্রিতরা। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য দীপংকর বর্মনও বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মতে, সামাজিক বিয়ের মাধ্যমে পরস্পরের ভরসার হাতটা যেমন আরও শক্ত হল তেমনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও যোগ্য মর্যাদা পেল। স্থানীয় মন্টুরঞ্জন সরকার জানান, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিয়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এদিকে, এতদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে খুশি হয়েছেন রাজমতিও।
সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তখনও ওই বাড়িতে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের ভিড়। বাড়ির উঠোনে চলছে রান্না। বাড়ির সাত কাজ সামাল দিচ্ছিলেন “নব বিবাহিতা’ স্ত্রী। বাড়ির সামনেই খোশ মেজাজে বসে ছিলেন “পাত্র’, পেশায় মাংস বিক্রেতা গুরুদয়াল। কথায় কথা অনেকদূর এগোল। কিন্তু সংসার করার এতদিন পর আনুষ্ঠানিক বিয়ে কেন ? জবাবে গুরুদয়ালবাবুর বক্তব্য, এতদিন রাজমতির প্ৰথম পক্ষের স্বামী জীবিত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গিয়েছেন। শনিবারই তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তাই রীতি মেনে বিয়ের মাধ্যমে রাজমতিকে নিজের বংশে তুলে নিলাম। শুধু তাই ? এবার কিছুটা লাজুক মুখে বৃদ্ধর জবাব, নতুন করে শাখা-সিঁদুর পরানোর মাধ্যমে পরস্পরের বিশ্বাসের ভিতটা আরও মজবুত হল।