Thursday, April 25, 2024
HomeUncategorizedসিতাই বিধায়ক বনাম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব! কোচবিহার জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে

সিতাই বিধায়ক বনাম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব! কোচবিহার জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সম্প্রতি কোচবিহার জেলা তৃনমূল কংগ্রেস রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব। এই অন্তর্দ্বন্দ্ব সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া এবং কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মন এবং তার অন্যতম সহায়ক চেয়ারম্যান উদয়ন গুহকে নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে জোড় কদমে। উত্তর পাল্টা উত্তরে জর্জরিত কোচবিহার জেলা রাজনীতি। প্রকাশ্যে উঠে আসছে গোষ্ঠী কোন্দল। জেলা সভাপতির সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণা অনেক ক্ষেত্রেই মানতে নারাজ সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা সিতাই এর একাধিক নেতৃত্ব। আবার জেলা সভাপতি তাদের বক্তব্য শুনতে নারাজ। এই নিয়েই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠছে, সরাসরি জেলা নেতৃত্ব কে আক্রমণ করছেন বিধায়ক এর অনুগামীরা। সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু পোস্ট এর বয়ান অনুসারে,”২০২১সালের বিধান সভা ভোটে যারা যারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে নি, তারা আবার একত্রিত হয়ে ব্লক সভাপতিদের ডেকে নিয়ে কোচবিহার জেলায় প্রেস মিটিং করে জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া মহাশয়ের (জয়ী বিধায়ক)নামে অভিযোগ পাঠাবে রাজ্য নেতৃত্ব দের কাছে। তাই বলি অন্যের দিকে আঙ্গুল না তুলে আগে নিজেদের কে ঠিক করুন।। আপনাদের অস্তিত্ব কিন্তু হারিয়ে গিয়েছিল।।”আবার কেউ মন্তব্য করছেন,”জেলা নেতৃত্ব আবার প্রমাণ করলেন সিতাই বিধানসভা গন্ডগোল পাকানোর মূল কারিগর জেলা নেতৃত্ব।।”কেউ লিখছেন,”এই জেলায় একমাত্র জগদীশচন্দ্র বসু মহাশয় লোকসভায় লিড দিয়েছে, বিধানসভা তেও তিনি জয়ী। এটাই এনার অপরাধ।”এইরকম একাধিক মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা নেতৃত্ব দের বিরুদ্ধে। সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মন এবং উদয়ন গুহ কে। গিরিন বাবু অবশ্য প্রকাশ্য মন্তব্য করে বলেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণের কোন উত্তর তিনি দেবেন না। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্তের দল অবিচল থাকবে। জগদীশবাবুর অন্যতম অনুগামী বিশু রায় প্রামানিক এক পোস্টের মাধ্যমে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন,”গিরিন বাবু ও উদয়ন বাবু আপনারা নেতাগিরি মারছেন নিজের ও নিজের ওয়ার্ডে কত ভোটে হেরেছেন মনে পড়ে আর আপনারা বসুনিয়া বাবুর সাথে লড়ছেন ওনার নিজের বুথের খবরটা নিয়ে যান।” ইতিমধ্যেই জেলা নেতৃত্ব দের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সুর চড়িয়েছিলেন জগদীশবাবু। তিনি বলেছিলেন জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যান কতিপয় কিছু দুষ্কৃতিকারী যারা 2021 এ বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিল তাদেরকে দিয়ে সিতাই এলাকায় অশান্তি তৈরি করতে চাইছে। পরবর্তীতে এই ধরনের ঘটনা কচলে রাজ্য নেতৃত্তের কাছে বার্তা দিতে বাধ্য থাকবে জগদীশবাবু।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে আজ যারা তৃণমূল কংগ্রেসের কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা 2011, 16 এবং একুশে কোথায় ছিল। 2011 থেকে জলের ধারা বজায় রেখে এসেছে সিতাই বিধানসভা। প্রথম অবস্থায় 2011 তে কংগ্রেস কে সাথে নিয়ে সিতাই বিধানসভার প্রথম জয়লাভ করে ডানপন্থী তৃণমূল কংগ্রেস জোট। পরবর্তীতে পরপর দুই দফায় অর্থাৎ 2016 এবং 2021 এ একক ক্ষমতায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। বিধায়ক হন জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। এমনকি 2019 লোকসভা তে তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবি হওয়া সত্ত্বেও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ত্রিশ হাজারের বেশি ভোটে লিড ছিল তৃণমূলের। অভিযোগ উঠছে সাংগঠনিকভাবে শক্ত সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র কে রাজনৈতিক চক্রান্তে আক্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। বলাবাহুল্য বর্তমানে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছেন গিরীন্দ্রনাথ বর্মন তাকে ছিয়ানব্বই সালের পর প্রকাশ্য রাজনীতিতে দেখা যায়নি। 2015 সাল পর্যন্ত বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ ফরওয়ার্ড ব্লক এর বিধায়ক এবং সংগঠক ছিলেন। সুতরাং অভিযোগ দায়িত্ব পেয়ে তারা পুরনো দিনের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উপর আঘাত হানছে। যদিও বা জেলা সভাপতি পুরো বিষয়টাকে দলীয় সিদ্ধান্ত বলে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। তিনি বলছেন দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে কোন আচরণ দল কোন অবস্থাতেই মেনে নেবে না। সিতাই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একমাত্র বিধানসভার যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অমান্য হয়, পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। এই সবটাই দল বিরোধী কাজ কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া হবে না। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সকলকে সেভাবেই চলতে হবে। অপরদিকে জগদীশবাবু বলেন, দল সিদ্ধান্ত নিতেই পারে কিন্তু তার কিছু নিয়ম কানুন আছে। হুট করে কাউকে বহিস্কার করা যায় না, দলের প্রটোকলের বিষয় রয়েছে। জেলা সভাপতির অন্তত এই বিষয়গুলি নজর রাখা উচিত।
বাকবিতন্ডা যাই হোক জেলা নেতৃত্ব দের সঙ্গে সিতাই এর লড়াই জমে উঠেছে, আসন্ন পৌর ভোট এবং পরবর্তীতে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচন। দলীয় এই অন্তর্দ্বন্দ্ব দলকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে নাকি সমৃদ্ধ করবে সেটাই এখন দেখার।।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments