১৯৫০ থেকে ৬০ এর দশকে মুম্বইয়ের ঝাঁ চক চকে দুনিয়ার থেকে আলাদা একটা জায়াগা দক্ষিণমুম্বইের যৌনপল্লী কামাঠিপুরা। এক কিশোরী হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে রয়েছে কোঠা বা পতিতাপল্লীর দরজার বাইরে। এভাবেই শুরু সঞ্জয় লীলা বনশালীর ছবি গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়ারি। ১৬ বছরের একটি কিশোরী যাকে মোটে পাঁচশো টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় কামাঠিপুরার এক পতিতাপল্লীতে।এবার তার চোখ দিয়ে দেখেনো হবে গঙ্গুবাঈয়ের গোটা জীবনকে। জানবে কেমন হল গঙ্গুবাঈ, কতটা প্রত্যাশা পূরণ করলেন আলিয়া ভাট?
এস হুসেন জাইদির লেখা বই ‘মাফিয়া কুইনস অফ মুম্বই’ থেকে জানা যায়, মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাবার হিসাবরক্ষকের সঙ্গে গঙ্গা অর্থাৎ (পরবর্তীকালে গঙ্গুবাঈ) হরজীবনদাস কাথিওয়াড়ির গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। প্রেম করে বিয়ে করেন রামনিক লালকে কিন্তু প্রেমে ধোঁকা খেতে হয়েছিল এই কিশোরীকে। দুর্ভাগ্য বছর ১৬-র কিশোরীকে মাত্র ৫০০ টাকায় তাঁকে বিক্রি করে দেয় তাঁর স্বামী রামনিক লাল । তারপর থেকেই মুম্বইয়ের সবথেকে বড় পতিতালয়ে থাকতে শুরু করেন গঙ্গু (Gangubai Kathiawadi) । বার বার ধর্ষিতা হয়েছেন গঙ্গু। কিন্তু মনের জোর হারাননি। তারপর একদিন এই কিশোরী হয়ে উঠলে গোটা কামাঠিপুরা অঞ্চলের ‘ম্যাডাম’। কিংবা হর্তা কর্তা বিধাতা বললেও ভুল হবে না।
তবে এই ছবির সৌন্দর্যসেখানেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে গঙ্গু জীবনের পরিবর্তন পর্দায় তুলে ধরেছেন সঞ্জয় লীলা বনশালী তা দেখার মতো। যদি গল্পের চলনের কথা বলা হয় সেটা বেশ স্লথ। তবে যেটা প্রায় সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এই ছবির চাচা ছোঁলা সব সংলাপ।
কেমন হল?
এক কথায় বলতে গেলে গোটা ছবিটা জুড়ে শুধুই আলিয়া ভাট ( Alia Bhatt)। পুরো ছবিতে শক্ত হাতে গঙ্গুবাঈ এর মতো চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন আলিয়া। তবে ছবি শুরু হওয়ার পর দর্শকদের খানিকটা হয়তো আলিয়াকে এই চরিত্রে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে। তবে যে ভাবে আলিয়া (Alia Bhatt) তাঁর সংলাপ এবং গঙ্গুর ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে গোটা ছবি জুড়ে সাদা শাড়িতে আলিয়া (Alia Bhatt) খাণিকটা হলেও অস্বস্তি দেয়। ছবিতে রহিম লালার চরিত্র অজয় দেবগন (Ajay Devgn) দেখার মতো। তবে অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রী যেমন সীমা পাওয়া, বিজয় রাজ, জিম শোরাব তাঁরা প্রত্যকেই যতটুকু চরিত্র পেয়েছেন তাতে অনবদ্য। কিন্তু তেমন কিছুই করার ছিল না চরিত্রগুলির তাই ছবিটা আলিয়ার (Alia Bhatt) শো বললে ভুল হবে না। যেটা মনে রাখার মতো সেটা হল গঙ্গুর সঙ্গে শান্তনু মহেশ্বরীর প্রেমের ট্যাকটা। গোটা ছবিতে অন্যতম সেরা অংশ গঙ্গু ও তাঁর প্রেমিকের
বনশালী এই ছবিটি খাণিকটা হুসেন জাইদির বইয়ের মতে এক একটা চ্যাপটার বা এপিসোডেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। গঙ্গুবাঈয়ের কামাঠিপুরায় আসা সেখান থেকে সেখানকার একছত্র রানি থেকে সমাজকর্মী গঙ্গুর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই ছুঁয়ে গিয়েছেন পরিচালক তবে তার পর মনে হয় যেন অনেক কিছু বলা বাকি রয়ে গেল গঙ্গুরজীবন নিয়ে।
সঞ্জয় লীলা বনশালীর (Sanjay Leela Bhansali) অন্য সব ছবির মতো এই ছবিরও প্রোডাকশন ডিজাইন অতুলনীয়।ছবিতে প্রতি গান যে যত্ননিয়ে বানানো তা ছবি দেখলেই বোঝা যায়। তবে Dholida ছাড়া আর কোনও গানই তেমনদাগ কাটতে পারেনি। বনশালীর চোখ দিয়ে যেভাবে ক্যমেরার লেন্স দিয়ে কামাঠিপুরাকে বড় পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। তবে যদি সিনেমার কথা বলা হয় তাহলে ছবিটি প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি টানা হয়েছে।যদিও ছবির প্রথমার্ধে ভারী ভারী সংলাপ ও গল্প দর্শকদের বড় পর্দা থেকে চোখ সরাতে দেবে না।
তবে যদি আপনার বইটি পড়া থাকে আর এই সিনেমা থেকে আরেকটু বেশি কিছু জানতে চান গঙ্গুবাঈ সম্বন্ধে সেক্ষেত্রে হয়তো নিরাশই হবেন।