দেবাশীষ বিশ্বাসঃ
২০১৫ সালে বাম দুর্গের পতন ঘটে মাথাভাঙ্গা পৌরসভায়। নতুন দায়িত্বভার বুঝে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পৌর প্রধান হিসেবে লক্ষপতি প্রামানিক এবং উপ পৌরপ্রধান চন্দন দাস। অনুন্নয়নের ডুবে থাকা মাথাভাঙ্গা পৌরসভায় একাধারে ৩১ টি প্রকল্প কে বাস্তবায়ন করে পৌরসভায় সম্পূর্ণ রূপ দান করেন উপ পৌরপ্রধান। চন্দন বাবুর হাত ধরে তৈরি হয় রাস্তাঘাট, সড়কবাতি এবং উন্নত বাজারব্যবস্থা। জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে তার আমলেই, এই দাবি করেন মাথাভাঙ্গার কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। পৌর এলাকার বাসিন্দা জগদীশ বর্মন, দীপঙ্কর দাস, শিক্ষিকা মৌসুমী বড়াল, শিক্ষিকা দেবিকা গোস্বামী দের মত অনুসারে, বর্তমান পৌর এলাকার যেভাবে বিকশিত হয়েছে তার সব থেকে বড় কারণ চন্দন দাস। পৌরসভার জন্য আর্থিক বরাদ্দ থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রকল্পে নিজে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেছিলেন তিনি। নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার শিশু পার্ক তৈরি করে উন্নয়ন, বাধের রাস্তা নির্মাণ, ছিল বিগত পৌরবোর্ড এর সব থেকে বড় কীর্তি। কিন্তু আজ তিনি ব্রাত্য।
বিগত দুই বছর থেকে পৌরবোর্ড নেই, দায়িত্বভার সামলে আসছেন পৌর প্রশাসক মন্ডলী। শুধু মাথাভাঙ্গা নয় জেলার প্রায় প্রতিটি পৌরসভা আইন প্রশাসক মন্ডলীর আধিকারিকরা রয়েছেন শাসক দলের, অর্থাৎ তৃণমূলের। শাবানার প্রভাষক মন্ডলীর প্রধান বিগত পৌর প্রধান লক্ষপতি প্রামানিক। তার সঙ্গে রয়েছেন আরো কয়েকজন। সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রশাসক মন্ডলীতে স্থান পেয়েছেন পরাজিত তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। শুধু নেই চন্দন দাস। জেলার অন্যান্য পৌর প্রশাসক মন্ডলীতে ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য থাকলেও মাথাভাঙ্গা তে এই বিরম্বনা কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের মনে। দুই নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা সন্তোষ কবিরাজ, চার নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকোমল বাগচী দের কথায়, দলীয় অন্তর কলহের জন্যেই মাথাভাঙ্গা পৌরসভা অন্যতম দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি ব্রাত্য। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিনি রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাথেই। রবি ঘনিষ্ঠ বলে বদনাম রয়েছে।
অনান্য খবর- আত্মার শান্তির কামনার পথ ডুয়ার্সের “ফলাইচা”
যার হাত ধরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, মাথাভাঙা পৌর প্রশাসক মন্ডলী থেকে বিতাড়িত তিনি
অনান্য খবর- ফালাকাটা থানার উদ্যোগে সচেতনতা শিবির ও দুঃস্থদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয়ের পরে জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকেই এক প্রকার পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে চন্দন দাস কে বলে অভিযোগ। সাংগঠনিক তো বটেই মানুষের জন্য কাজ করতে থাকা এই ব্যক্তি কে কেন শাসকদল তার যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আসন্ন পৌর নির্বাচনে চন্দন দাসের এই ইস্যু মাথাভাঙ্গা পৌরসভা ক্ষেত্রে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলবে সেটাই এখন দেখার। যদিওবা এই বিষয়ে চন্দন দাস সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি শুধু বলেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই আছি। তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলাম আছি এবং অবশ্যই পরবর্তীতেও থাকবো।
অনান্য খবর- মহেন্দ্র সিং ধোনির রেকর্ড টপকে গেলেন বিরাট কোহলি, পড়ুন
বলাবাহুল্য শুধু চন্দন দাস নয় লোকসভা নির্বাচনের পরে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় তার স্ত্রী মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম বর্ষীয়ান নেত্রী কল্যাণী পোদ্দারকে। পানীয় জল ঘোলা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। মাথাভাঙ্গা বিধানসভা এলাকায় সাংগঠনিক শক্তিতে চন্দন দাস এবং তার স্ত্রী কল্যাণী পোদ্দারের অবদান অপরিসীম বলে দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীদের। সুতরাং তাদের প্রতি দলের এই বিমাতৃসুলভ আচারণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। বিধানসভা নির্বাচনে মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস কে। আগামী পৌরনির্বাচন শাসক দলকে ঠিক কোন পথে চালিত করবে তার অপেক্ষায় মাথাভাঙ্গা।।