Wednesday, April 24, 2024
Homeআলিপুরদুয়ারমুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ! তৃণমূল নেতা পাসাং লামাকে গ্রেফতার করল আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ! তৃণমূল নেতা পাসাং লামাকে গ্রেফতার করল আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ

মুখ্যমন্ত্রীর যেমনটা নির্দেশ তেমনি জেলা পুলিশ সুপারের কাজ।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাসাং লামাকে গ্রেপ্তার করলো জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল।যার নেতৃত্বে ছিলেন আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও দেবাশীষ চক্রবর্তী।রবিবার সন্ধে সাতটার পর গোপনে কালচিনি ছেড়ে পালানোর সময় মাদারিহাটের রাঙ্গালিবাজনা এলাকার ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের টোল গেট থেকে ওই মোস্ট ওয়ান্টেডকে গ্রেপ্তার করা হয়।গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকদের নিয়ে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের প্রশাসনিক বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশীকে প্রকাশ্যে বলেছিলেন “কালচিনির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আছে যে, দিনেরপর দিন বিভিন্ন ধরনের ‘হেরিটেজ’ সম্পদ অবৈধ ভাবে বিক্রি করে দিচ্ছে।খোঁজ খবর নিয়ে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর এসপি বলেন “যতটা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে।” তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ওই তৃণমূল নেতা।ইতিপূর্বে ওই বৃহস্পতিবার রাতেই পাসাং লামার ভাই নিমা লামার কালচিনি চা বাগানের অবৈধ কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার সেগুন কাঠ বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ ও বনদপ্তর।রবিবার দিনভর অভিযানে কালচিনি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় কোটি টাকার বিদেশি কাঠ।পুলিশের দাবি পাসাং লামার মদতেই রমরমিয়ে চলছিল ওই অবৈধ কাঠের কারবার।এছাড়াও ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গোটা কালচিনি ব্লক জুড়ে বিভিন্ন পাহাড়ি নদী ও পাথর খাদান গুলিতে একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করে গুন্ডা ট্যাক্স আদায়ের ভুড়িভুড়ি অভিযোগ ছিল পুলিশের খাতায়।তাছাড়া তোলা আদায়, চা বাগান মালিকদের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের মত গুরুতর অভিযোগ ছিল।নেহাত শাসক দলের ডাকসাইটে ব্লক সভাপতি হওয়ার জন্য এতদিন পুলিশ তার কেশাগ্রও ছুঁতে পারেনি।দীর্ঘদিনের হারানো জমি উদ্ধার করতে গত বিধানসভা নির্বাচনে পাসাং লামাকেই কলচিনি বিধানসভা আসনে প্রার্থী করেছিল শাসক দল।কিন্তু বিজেপির প্রার্থী বিশাল লামার সামনে কার্যত মুখথুবড়ে পড়েন পাসাং।প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভোটে তিনি হেরে যান।এরপর তাঁকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দিতে ব্লকের পোড়খাওয়া শ্রমিক নেতা গনেশ মাহালিকে সরিয়ে পাসাংকে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদে বসায় তৃণমূল।অভিযোগ তারপর থেকেই তাঁর ঔদ্ধত্য মাত্রা ছাড়ায়।রবিবার বিকেলেই এক সাংবাদিক বৈঠকে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশিত ব্যক্তিটি পাসাং লামা ছাড়া আর কেউ নয়।তিনি বলেন “আইন অপরাধের বিচার করে।তা তিনি যতটাই প্রভাবশালী হোননা কেন।পাসাং লামার ক্ষেত্রেও প্রশাসন ও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।আর এটাও প্রমাণিত হ’ল যে দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যা খুশি করলে, তাঁকে আমাদের সর্বোচ্চ নেত্রী কখনই রেয়াত করেন না।” তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, গত কয়েক বছরে অবৈধ কারবারের জেরে পাসাং লামা ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে।কথায় কথায় বিলাসবহুল গাড়ি কেনা থেকে সোনার গয়না কেনাটা ছিল পাসাংয়ের নেশার মতো।কালচিনি চা বাগানের সামান্য চা শ্রমিক থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের হাত ধরে পাসাং লামার রাজনৈতিক উত্থান হয়।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কালচিনি চা বাগান থেকে ভোটে জিতে প্রথমবার জনপ্রতিনিধি হন তিনি।তারপর থেকেই সাগরেদ বাহিনী গড়ে গোটা কালচিনি ব্লকে প্রভাব বাড়ায়ে গিয়েছেন পাসাং।এমনকি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর হয়ে একাধিক জনসভায় প্রচারে এসেছেন বিমল গুরুং।জেলা বিজেপির সভাপতি ভূষণ মোদক বলেন ” সম্ভবত বড্ড বেলাগাম হয়ে পড়েছিলেন পাসাং লামা।তাঁকে বোধহয় কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না।নইলে এমন পাসাং লামাদের ভিড় তো গিজগিজ করছে তৃণমূল দলে।গ্রেপ্তারই যখন করা হ’ল তবে তার আগে কেন তাঁকে দল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বহিষ্কর  করলো না? এর জবাব কে দেবে? দীর্ঘদিন ধরে কথায় কথায় খুন, পাথর খাদানে মাফিয়াগিরি চালানো, জঙ্গল কেটে কাঠ পাচার ও তোলা আদায়ের অভিযোগ তো ছিলই পাসাং লামার বিরুদ্ধে।তা হলে এতদিন ধরে শাসক দল কী চোখে ঠুলি এঁটে ছিলো? আদতে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বনাবনি না হওয়াতেই ওই গুন্ডা নেতাকে পুলিশ পাকড়াও করেছে।” জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন “মূলতঃ অবৈধ ভাবে কাঠ পাচারে যুক্ত থাকার অপরাধে জেলা ছেড়ে পালানোর সময় পাসাং লামাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলছি না।” ২০২১ সালে শাসক দলের হয়ে আদালতে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন পাসাং লামা তাতে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মোট ১২টি ক্রিমিনাল কেসের কথা উল্লেখ করেছিলেন পাসাং।যারমধ্যে ছিলো অবৈধ ভাবে জঙ্গল কাটা, সরকারি কাজে বাধা দান ও অযথা প্রভাব খাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ।   

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments