৪৯ বছর বয়সে পা দিলেন সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই ‘গুরু’র জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। মনে করা হয়, তিনি বর্তমান শতাব্দীর অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। আসুন সচিনের ৪৯তম জন্মদিন পালনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সম্পত্তির দিকেও একবার চোখ বোলানো যাক।
বিশ্ব ক্রিকেট তো বটেই, দেশের অন্যতম আর্থিক প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে মনে করা হয়। ক্রিকেটের প্রতি সচিনের যে একনিষ্ঠ অধ্যাবসায় ছিল, সেটা আজ তাঁকে এক কামরার ঘর থেকে বিলাসবহুল প্রাসাদে তুলে এনেছে। জানা গিয়েছে, সচিনের ব্যবসা এবং মোট সম্পত্তির পরিমাণ নাকি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সচিনের লাইফস্টাইল, মোট সম্পত্তি এবং ব্যবসা নিয়েই আলোচনা করব।
সচিনের মোট সম্পত্তি
ক্রিকেট সচিন তেন্ডুলকরের আয়ের প্রথম উৎস হতে পারে, কিন্তু পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার এবং চুক্তি থেকেও প্রচুর অর্থ কামিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ডটেলের সঙ্গে সচিনের প্রায় ৩০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনী চুক্তি হয়েছিল। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে তাঁর একটা ফুটবল দলের মালিকানাও রয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগে বেঙ্গালুরু ব্লাস্টার্স নামে একটি দল তিনি কিনে রেখেছেন।
সম্প্রতি তিনি আবার করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্য ৫০ লাখ টাকা সাহায্য় করার কথা ঘোষণা করেছেন।
এছাড়া সচিনের দুটো রেস্তোরাঁ রয়েছে – একটি মুম্বইয়ে এবং অপরটি বেঙ্গালুরুতে। একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, সচিন তেন্ডুলকরের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১,১১০ কোটি (১৫০ মিলিয়ন ডলার)। আর সেকারণেই তিনি আর্থিক দিক থেকে বিরাট এবং ধোনির থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির মধ্যে বাড়ি, গাড়ি, বিনিয়োগ, পারিশ্রমিক এবং বহু সম্পত্তি রয়েছে।
সচিনের লাইফ স্টাইল
১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের (তৎকালীন বম্বে) দাদরে অবস্থিত একটি নার্সিংহোমে জন্মগ্রহণ করেন সচিন। তাঁর বাবা রমেশ তেন্ডুলকর একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ছিলেন। মা রজনী তেন্ডুলকর একটি বিমা সংস্থায় কাজ করতেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। শুরুর দিকে একটু সমস্যা হয়েছিল বটে, কিন্তু পরবর্তীকালে সেটা তিনি মানিয়ে নেন। ক্রিকেটকেই নিজের জীবন করে নিয়েছিলেন সচিন এবং সেই লক্ষ্যপূরণ করার জন্য তিনি সবকিছু করেছিলেন। ক্রিকেটার হিসেবে নিজের কেরিয়ার নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। গোটা জীবনটাই এই খেলার জন্য তিনি উৎসর্গ করে দেন।
১৯৯৫ সালে অঞ্জলিকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। মেয়ের নাম সারা এবং ছেলের নাম অর্জুন। তাঁরাও যথেষ্ট বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। ২০০৯ সালে মুম্বইয়ের পশ্চিম বান্দ্রায় সচিন যে বাড়িটা তৈরি করেছে, বর্তমানে তার আনুমানিক মূল্য দাঁড়াবে ৮০ কোটি টাকা।
সচিন তেন্ডুলকরের বিলাসবহুল গাড়ি
আমরা প্রত্যেকেই জানিয়ে যে সচিন তেন্ডুলকর কতটা গাড়ি ভালোবাসেন। সূত্রের খবর, তাঁর গ্যারেজে কমপক্ষে ১০টি গাড়ি রয়েছে। সেগুলো হল:
Ferrari 360 Modena
Nissan GT-R
BMW i8
BMW M5
Mercedes-Benz
BMW X5M
BMW M6
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটা গাড়ি রয়েছে।
সচিন তেন্ডুলকর গাড়ি প্রচন্ড ভালোবাসেন। আর সেকারণেই বিলাসবহুল গাড়ির নতুন কোনও মডেল এলেই তিনি সেটা কিনে নেন। এছাড়া বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। সেখান থেকেও একটা মোটা অঙ্কের অর্থ তিনি উপার্জন করেন। সচিনের কাছে বর্তমানে যত সংখ্যক গাড়ি রয়েছে, তার মোট আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
সচিনের ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট
যত দিন যাচ্ছে সচিন তেন্ডুলরের জনপ্রিয়তা যেন আরও অনেকটা করে বেড়ে যাচ্ছে। তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়। ফলে তাঁর সঙ্গে বহু নামীদামি সংস্থাই চুক্তিবদ্ধ হতে চায়। মানুষের মনের মধ্যে সচিনের এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যিনি কখনও কারোর সঙ্গে কোনও বিতর্কে জড়াননি। ফলে লোকজন তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হন। তাঁর দেখানো রাস্তাই অনুসরণ করে। যে সংস্থাগুলোর সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকর চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, সেগুলো হল:
পেপসি
অ্যাডিডাস
টিভিএস
এমআরএফ
ব্রিটানিয়া
ক্যানন
ফিলিপস
ভিসা
রেইনল্ডস
স্যানিয়ো বিপিএল
বুস্ট
তোসিবা
জি হনজ
সানফিস্ট
এয়ারটেল
ক্যাস্ট্রল ইন্ডিয়া
কোকা-কোলা
কলগেট
এবং আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে এই তালিকায়
শোনা যায়, বছরে সচিন তেন্ডুলকর এই বিজ্ঞাপনী চুক্তি থেকে ১৭ থেকে ২০ কোটি টাকা নাকি উপার্জন করেন। বর্তমানে এটাই তাঁর উপার্জনের প্রধান উৎস।