কোচবিহার:
কোচবিহার পৌর এলাকার ষোল নাম্বার ওয়ার্ডের একটি কালভার্ট সংস্কার করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো রাজ আমলের এক প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। আর তাতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে শহর জুড়ে। কোচবিহারের যারা প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা করার দাবি রাখেন তারা ঝড় তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। দাবি, উন্নয়নের চাপে কোথাও কি নষ্ট হচ্ছে রাজ আমলের স্থাপত্য? কোচবিহারের অন্যতম ইতিহাস গবেষক ঋষিকল্প পাল বলেন, “দিন কয়েক হলো কালিকাদাস রোডের দক্ষিণে পাটাকুড়া ক্লাবের সামনে একটি পুলটি ভাঙা হয়েছে। এতোদিন ঢাকা পড়েছিল বলে বাইরে থেকে দেখে অনেকে বুঝতে পারতেন না যে নীচে এরকম একটি পুরনো নির্মাণ লুকিয়ে। পুল ভাঙতেই মাটির নীচ থেকে বেড়িয়ে এসেছে খিলান দেওয়া প্রায় ১৫ ফিট দৈর্ঘ্যের বড় কালভার্টটির কলেবর। এখন প্রশ্ন হলো তাতে কী হলো? তেমন কিছুই হয়নি। একটি পুরনো নির্মাণ-মাত্র। কিন্তু, নির্মাণটির নেপথ্য ইতিহাস যাঁদের কাছে পরিচিত তাঁদের কাছে স্বভাবতই এটি শুধুমাত্র একটি নির্মাণ নয়।”
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী কালিকাদাস রোডের যে অংশটিতে এই কালভার্টটি ছিলো একসময় সেদিকে ছিলো পূর্বতন কুচবিহার রাজ্যের মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণ-এর গুরুবংশ তথা রাজ্যের সবচাইতে বড় মকারারীদার, জমিদার রায় চৌধুরী তারিণীচরণ চক্রবর্তী-র প্রাসাদোপম আবাস। ভবনটির নাম ছিলো ‘কাটামারি হাউস’। চক্রবর্তীদের সিঙ্গিজানি ময়নাগুড়ির কাটামারি গ্রামে আদি নিবাস ও বিস্তৃত ভূসম্পত্তি ছিলো, সেই থেকে বাড়িটির নামকরণ। যদিও বা ওই বাড়িটির অস্তিত্ব এই মুহূর্তে আর নেই। ওই বড় কালভার্টটির দু’পাশে বড় ফটকের স্তম্ভের ওপর দুটি সুন্দর মূর্তি ছিলো। কালভার্ট থেকে সোজা রাস্তা চলে যেতো দু’ভাগে ভাগ হয়ে গাড়ী বারান্দার ভেতর। সামনে ছিলো যেন কোনো অলোকার বাগান, দেশী-বিদেশী ফুলের। বিশেষত গোলাপ-বাগানটি ছিলো অত্যন্ত মনোগ্রাহী। লন ও বাগান গ্রেকো-রোমান শৈলীর সুন্দর সুন্দর মূর্তি দিয়ে সাজানো ছিলো। বাড়ির পশ্চিমে ছিলো আস্তাবল! পূর্বে দুর্গামণ্ডপ ও ঘাট বাঁধানো পুকুর। একসময় শহরের ওপর প্রায় বত্রিশ বিঘা জমি নিয়ে বাড়ি ছিলো, যদিও পরবর্তীতে (রাজ-আমলেই) জমি অনেকটা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। আজ সবই ইতিহাস।
সুতরাং এই কালভার্টে টি শুধুমাত্র একটি নির্মাণ নয় একটি ইতিহাসের জলজ্যান্ত সাক্ষী। ইতিপূর্বে কোচবিহার শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হিসেবে কাজও চলছে। সৌন্দর্যায়ন, পুরনো স্থাপত্যকে সংরক্ষণ । সে ক্ষেত্রে দাবি উঠছে এই ধরনের ইতিহাস জড়িত স্থাপত্য গুলিকে কোনভাবে যদি সংরক্ষণ করা যায় তবে তা হেরিটেজ সম্পত্তি হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই ধরনের স্থাপত্য যে সময়ে তৈরি তা পুনরায় নির্মাণ করা বাস্তবে আর সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।