Friday, March 29, 2024
Homeদেশকি এই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প? যা নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ! জানুন বিস্তারিত

কি এই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প? যা নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ! জানুন বিস্তারিত

এ বার থেকে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে জওয়ান নিয়োগের ঘোষণা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারের ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। কী কারণে?

‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের একটি প্রত্যক্ষ সুযোগ হল, হাজার হাজার যুবক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু সমস্যা, চার বছর প্রশিক্ষণের পর দুই-তৃতীয়াংশকেই অবসর নিতে হবে। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, নিয়মানুবর্তিতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থেকে একটি বিশাল সামাজিক পরিবর্তন আশা করা যেতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

এক নজরে অগ্নিপথ প্রকল্প

*১৭-২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক সেনায় যোগ দিতে পারবেন। তাঁদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’।

*প্রতিবছর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টে কী ধরনের শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করছে কতজন করে প্রতিবছর নিয়োগ করা হবে।

*সেনায় শূন্য পদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

*প্রথম বছর নেওয়া হবে ৪০ হাজার তরুণকে। প্রথম বছর তাঁরা পাবেন ৩০ হাজার টাকা। চতুর্থ বছরে সেই টাকার অংক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে। আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন। সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও।

*চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে। বাকি ৭৫ শতাংশকে দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা। যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।

দিকে দিকে বিক্ষোভ কেন?

প্রকল্পটি ঘোষণার পরের দিন থেকে প্রতিবাদ শুরু হয় দেশের বিভিন্ন অংশে। বিহারের বক্সা এবং মুজফ্‌ফরপুরে জোরালো প্রতিবাদ করেন একাংশের যুবক। তাঁদের মতে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাকরির বড়ো ভরসা হল ভারতীয় সেনা। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণেরা মূলত সেনার চাকরিকে বেছে নেন। এই প্রকল্পে এই চাকরির নিশ্চয়তা কোথায়? সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

বিভিন্ন মহল থেকেই এই প্রকল্পের সমালোচনা করা হচ্ছে। চার বছর পর যাঁরা চাকরি পাবেন না, তাঁদের কী হবে? এতে কি বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে? বিশেষ করে তাঁরা যেখানে সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এতে দেশের বেকারত্বের তেমন কোনো সুরাহা হবে না। উলটে, চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে।

‘চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী সেনা’ নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্রমশই বিক্ষোভ দানা বাঁধছে রাজ্যে রাজ্যে। বিহার থেকে শুরু হওয়ার বিক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্যত্র। মূলত যে রাজ্যগুলির যুবকদের সেনায় যোগদানের হার বেশি, সেখানেই আন্দোলন অতিমাত্রায় ছড়াচ্ছে।

দেশপ্রেম না কি কর্মসংস্থান?

ভারতই এক মাত্র দেশ নয়, যেখানে এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইজরায়েল, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নর্থ কোরিয়া, সাউথ কোরিয়া, রাশিয়া, চিন, ইউক্রেন-সহ অন্যান্য দেশেই যুবসমাজকে দায়িত্ব পালনের আওতায় সাময়িক ভাবে সেনাবাহিনীতে নিজেদের অবদান রাখতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নিয়োগকে কর্মসংস্থানের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা না করে দেশের জন্য অবদান রাখার অপরিহার্য হিসেবেই বিবেচনা করা দরকার। তবে ভারতের মতো দেশে ছবিটা একটু ভিন্ন। পরিস্থিতি অনুযায়ী, এখানে দেশপ্রেমের চেয়ে কর্মসংস্থানের দিকটাই আরও বড়ো করে দেখা হয় বা দেখানো হয়। প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশ এমনটাও বলছেন, সরকারের এই নতুন প্রকল্পে রাজকোষের অর্থ বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সেনাকে আদপে ‘রক্ষী সরবরাহকারী এজেন্সি’-তে পরিণত করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments