ময়নাগুড়ি: – দেশে করোনা মহামারী ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্যে দৈনন্দিন সংক্রমণ কমলেও, আসন্য করোনার তৃতীয় স্টেজ নিয়ে চিন্তিত সকলে। মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব তৈরি করেই এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকার তাই আংশিক লকডাউন থেকে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে, যেখানে বেশ কিছু জরুরী পরিষেবা ব্যাতিত প্রায় সবকিছুই বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । নির্দিষ্ট সময়সূচী নিয়ে ঘোষিত হয়েছে হাট বাজার খোলা ও বন্ধের নির্দেশ। করোনা আবহে সরকারি নির্দেশ কে মান্যতা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ বাজার । এমন পরিস্থিতিতে দোকান পাট বন্ধের পাশাপাশি ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তবে এই নিয়মকে অমান্য করেই বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ প্রশাসন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নির্দ্বিধায় খোলা থাকছে বেশ কিছু দোকান পাট। সময়সূচী পেরিয়ে গেলেও দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে না , কেউ বা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করলেও চুপিসারে চালিয়ে যাচ্ছে বেচা কেনা।
তবে এমন পরিস্থিতিতে ময়নাগুড়ি ব্লকের দক্ষিণ মাধবডাঙ্গার প্রত্যন্ত এলাকা শর্মা পাড়ার ফালতুর মোড়ের কিছু কার্যকলাপ সকলের মন জয় করে নিয়েছে। সরকারি নির্দেশ মত সকাল দশ টায় বন্ধ হচ্ছে সব রকমের খুচরো থেকে পাইকারি ব্যবসা। খোলা থাকছে মিষ্টির দোকান, ওষুধের দোকান, সারের দোকান। মাস্ক ছাড়া কাউকে বাজার সামগ্রী কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। মুদি দোকানি চন্দন শর্মা জানান – ” সরকারি নির্দেশ মত আমরা দোকান খোলা-বন্ধ করছি, যদিও আমাদের রোজগার অনেকটাই কমে গেছে, আগে সারাদিন দশ হাজার টাকার বেচাকেনা হলেন এখন তা দুই হাজার টাকায় থেমেছে। আমরা বিভিন্ন মাইক্রো ফাইন্যান্স থেকে টাকা নিয়ে ব্যাবসায় নেমেছি, বর্তমানে সেই টাকা জমা করতে চরম আর্থিক সংকটে পরেছি। তবু এভাবে সরকারি নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে ব্যাবসা করর। বর্তমান কঠিন পরিস্থতিতে এইভাবেই সরকারের পাশে দাঁড়াব।
অনান্য খবর- যুব তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচি ফালাকাটায়
করোনা আবহে উত্তরবঙ্গকে পথ দেখাচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ‘ফালতুর মোড়’
আমরা এক হয়ে করোনা মহামারীরকে রুখবো।” ব্যাবসায়ীদের এহেন সচেততামূলক মনোভাব কে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মানুষ। স্থানীয় ব্যাক্তি সরেন্দ্র নাথ রায় জানান – ” বর্তমানে করোনা মহামারীর প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। জমায়েত থেকে হচ্ছে এই সংক্রমণ, আর বিভিন্ন বাজার এলাকায় হচ্ছে জমায়েত প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে। এই বিষয়ে আমরা চিন্তিত, কিন্তু আমাদের ফালতুর মোড়ের এহেন কার্যকলাপে আমরা সকলে অনেকটাই চিন্তা মুক্ত। সকাল দশটার পর, বাজারে কেউ থাকছে না। ফলে সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে। আমরা চাই ফালতুর মোড় সকলের কাছে দৃষ্টান্তমূলক বার্তা প্রেরণ করুক। ১.৫ একর আয়তন বিশিষ্ট এই বাজার। দৈনিক দুই হাজার লোকের সমাগম ঘটে বাজারে। এই বাজারে ৩০ টি স্থায়ী দোকান ও ৪০ টি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। সময়মত দোকান খুলে ব্যাবসা করে আবার সময়মত বন্ধ করে দেন তারা।
অনান্য খবর- ড্রাগন ফল চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন মাথাভাঙ্গার কৃষক নির্মল বর্মন
উল্লেখ্য গত একুশে মে স্থানীয় ক্লাব মাতৃ সংঘের উদ্যোগে ও ময়নাগুড়ি পুলিশ এর সহযোগিতার করোনা বিষয়ক আলোচনা সভা হয় ফালতুর মোড়ে। কাপড় ব্যবসায়ী তথা মাতৃ সংঘের কোষাধ্যক্ষ গৌরাঙ্গ শর্মা জানান – “ফালতুর মোড়ের সকল ব্যাবসায়ী, ক্লাব সদস্য, ও স্থানীয় জনগন নিয়ে আলোচনা সভা হয়। বর্তমান করোনা কলে যাতে সকলে সুস্বাস্থ্য মত ব্যাবসা করে, এবং এর সাথে সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয় বাজার খোলা ও বন্ধের সময়সূচী, এরপর ব্যাবসায়ীদের ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সভাটি সম্পূর্ণ করা হয়।” সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ময়নাগুড়ি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর তেনজিং ভুটিয়া। ফালতু নামে সবাই রসিকতা খুঁজে পেলেও, বর্তমানে এই ফালতুর মোড় উত্তরবঙ্গ কে সচেতনতার এক নতুন পথ দেখাচ্ছে।