Saturday, April 20, 2024
Homeকোচবিহারএই সময় প্রচন্ড ব্যস্ততা কোচবিহারের শোলা শিল্পীদের গ্রামে, পড়ুন

এই সময় প্রচন্ড ব্যস্ততা কোচবিহারের শোলা শিল্পীদের গ্রামে, পড়ুন

কোচবিহার:
কোচবিহার শহর থেকে মাত্র ২৩ কিমি দূরত্ব, সেখানেই দিন রাত এক করে কাজ করে চলেছেন ওরা। নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। মা কে সাজাতে হবে যে… মায়ের সাজে তাদের হাতের কাজের জুড়ি মেলা ভার… তাই তারা ব্যাস্ত। কথাও হল কাজ করতে করতে… কোচবিহার দিনহাটা ১ ব্লকের ভ্যাটাগুড়ি এলাকার মালাকার পাড়া, বা কোচবিহারের শোলা শিল্পী দের গ্রাম(বালাডাঙ্গা)…… কি ভাবে আছেন ওরা… কাজের ব্যবস্ততায় কি খাচ্ছেন, নাকি দাড়িদ্রতার অন্ধ কারে হাড়িয়ে যাচ্ছে গ্রামের ৪২ টি পরিবার…??
গ্রামের অন্যতম প্রবীন নাগরিক লিচু মালাকার, তিনি বলেন তার জীবনের প্রথমাবস্তার কথা, না পড়াশনা সেই ভাবে করে হয়ে ওঠা হয় নি , বয়স জখন ১০/১২ তখন থেকেই বাবার কাছে কাজ শিখেছেন তিনি, তিনি বলেন তার দাদু কোচবিহার রাজ বাড়ির দেবির মুকুট, অলঙ্কার বানাতেন। তার ছোট বেলায় তিনি দেখেছেন এলাকায় হাতি করে এসে মালা মুলুট নিয়ে যেত রাজ কর্মচারি রা। জীবনের ৯১ তম বছরে এসে সেই দিন গুলি খুব মোনে পরে তার। এখন দিন পাল্টেছে, শুধু শলা নয় এখন ব্যবহার করা হয় থার্মকল। খুব পাতলা করে কেটে সেটা শোলা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কন উপায় নেই, প্রধান প্রতিবন্ধকতা কাচা মাল। কোচবিহারে শোলার উতপাদন নেই বললেই চলে, তাই মাল আশে আসাম থেকে, চলতি বছরে মাল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বসেছে বাড়তি কড়। একই সাথে মজুরি বাড়লেও চাহিদা কমেছে। আধুনিক্তার দৌলতে শোলার অলঙ্কার , মুকুট বিশেষ ব্যবহার হয় না, শুধু মৃন্ময়ী মুর্তি তে যেটুকু লাগে। গোটা গ্রামে শিলার মালা চলতি মরশুমে তৈরী হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ। তিন ধরনের মালা তিন সাইজের মালা তৈরি করছেন শিল্পীরা। একই সাথে কদম ফুল বানাচ্ছেন পরিবার প্রতি গড়ে ৫০০০০। শিল্পী রত্না বর্মন বলেন – চাহিদা কমে এসেছে। তবে আমাদের কাজে কন খামতি নেই, কোচবিহার শুধু নয়, আসাম, ভুটান থেকেও প্রচুর অর্ডার আসে। আমরা কোচবিহারে মাল দেই। সারা বছর ই কাজ হয়। পুজোর সময় ও বিয়ের সময়ে চাপ ভিষন বেরে যায়। এই বছরে মালের দাম কিছুটা বেরেছে, বাংগালী দের ক্ষেত্রে বিজয়াতে প্রয়জনীয় কদম ফুলের ৫ টি প্রকারান্ত্র আছে এবার, যেহেতু দাম বেরেছে তাই মাপেও বাড়ানি হয়েছে।একটি শোলা কাঠি দিয়ে মাত্র ৩টি ফুল হয়। মুকুটের জন্য বা চুড়ার জন্য ৪টি কাঠি লাগে। জগান টাই নেই ঠিকমত।
প্রবীন থেকে নবীন পুরুষ মহিলা থেকে বাড়ির ছেলে মেয়েদের ও আজ দেখা গেলো কাজ করতে, কারিগ্য প্রমানন্দ বর্মন জানাচ্ছেন – গোটা গ্রামের ৪২ পরিবারের প্রায় সকলেই এই কাজ করে। এটাই তাদের বংশ পরম্পরায় চলে আসছে, বাড়ির শিশু রা জন্মের পর থেকেই এই কাজ করে। এটাই এই গ্রামের ঐতিহ্য। প্রায় ১৬০০ শল্পী নিয়ে এই গ্রাম এখন নজরে আশে নি কোনো নেতা মন্ত্রী থেকে প্রশাসনের, এভাবেই চলছে। গ্রাম পঞ্চায়ত তাদের রাস্তা করে দিয়েছে ভোতের আগেই। রাস্তায় বাতি দরকার আর দরকার সাহাজ্যের।
সকাল হয় প্রায় ৫টায়। বাড়ির গৃহিনী আগেই ওঠেন, ঘড় দোর ঝাড় পছ করে মাটি দিয়ে লেপা হয়, তার পরে শুরু হয় কাজ। একবার কাজ শুরু করলে আর ওঠার উপায় থাকে না, তাই সকাল সকাল স্নান সেরে কিছু খেয়ে কাজ শুরু করেন ওড়া। রাতের ভাত একটু বেশি ই করা থাকে। তাতে জল দিয়ে বানান হয় পান্থা, তাতে থাকে কাচা পেয়াজ, লংকা আর সেঁকা (শুটকি মাছের এক বিশেষ পদ)। সকালের খাবার শেষ করে কাজ শুরু, দুফুরের রাহ্না হয় ২টার দিকে, কারন বাড়ির গৃহিনী ও এক জন শিল্পী। সন্ধ্যার পরে বিশ্রাম, তবে এই বছর তার জো নেই,থার্মকল কাটতে হচ্ছে পরের দিনের জন্য।
দাড়িদ্রতা বিশেষ নেই, তবে অভাব আছে, বলেই জানালেন সঞ্জিত মালাকার। তিনি বলেন – কাজ করে কোন মতে চলে যাচ্ছে। মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক দেবে, পড়া চালাতেও সমস্যা হচ্ছে। তাও এই কাজ টাই জানি তাই এটাই করি।ব্যবসার সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হল ফোড়ে। কোচবিহার থেকে মহাজনের ফোড়ে এসে মাল কিনে নিয়ে জায়, তাই সঠিক দাম পাই না, ফোড়ে দের ছাড়া মাল বেচলে লাভ অবশ্যই আছে।
ডাকের সাজ শোলার সাজে থাকেন মা… এই সাজ জোগান দেন এই শিল্পী রা… কিভাবে কাটে তাদের পুজা… অর্পিতা মালাকার , পিয়ালী মালাকার দের কথায়, পুজার চার দিন কাজ বন্ধ। অই চার দিন আমরা ঘূরতে যাই, কোচবিহার , দিনহাটা, কখনো বা আলিপুর। পারাতেই একটা পুজা হয়, সকাল টা সেখানেই কেটে যায় আনন্দে। তার পরে সন্ধ্যায় ঘুরতে যাই। সারারাত ঘুড়ি। ভোরে ফিড়ে আশি। প্রতিদিন যাই না, ১/২ দিন যাই বাকিটা সময় পড়ায় থাকি। অষ্টমি তে খিচুড়ি হয়। তার স্বাদ মোনের মাঝে লেগে থাকবে সারাজীবন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments