Friday, March 29, 2024
Homeরাজনীতিফিরে দেখা ২১ জুলাই, কি ঘটেছিল ১৯৯৩ সালে আজকের দিনে?

ফিরে দেখা ২১ জুলাই, কি ঘটেছিল ১৯৯৩ সালে আজকের দিনে?

এক সাংসদের দল থেকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল, ২১ জুলাই দেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নানাবিধ নাটকীয় উত্থান-পতন। বিগত দু’দশক ধরে এই দিনটিই তৃণমূলের অঘোষিত বার্ষিক রাজনৈতিক সমাবেশ। এই দিনটির তাৎপর্য তৃণমূলে ঠিক কতটা তা একটা ঘটনার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০১১ সালের ১৩ মে (বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল) ৩৪ বছরের বাম শাসনে ধস নামিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পর আলাদা করে কোনও বিজয় উৎসব করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সেদিন বেলা গড়াতেই জনাদেশ স্পষ্ট হয়ে যায়,  আর এরপরই দৃশ্যত আপ্লুত মমতা জানিয়ে দেন, জয়ের উদযাপন হবে ২১ জুলাই শহিদ তর্পণের দিন। তবে এই ২১ জুলাইয়ের ইতিহাসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সে অর্থ কোনও সম্পর্ক নেই। বা বলা ভাল, তৃণমূলের জন্মের আগেই ঘটে গিয়েছে ‘একুশে জুলাই’। বরং বলা যেতে পারে, একুশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কী ঘটেছিল ২১ জুলাই? কেন এই দিনটিকে তৃণমূল ও কংগ্রেস ‘শহিদ দিবস’ হিসাবে পালন করে?

একুশের মঞ্চই সাক্ষী থেকেছে তৃণমূলে ১৯৯৩ সালের পর থেকে প্রতিবছর এই দিন শহিদ দিসব হিসেবেই পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রতিবছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে দলের আগামী দিনের লক্ষ্যপূরণের বার্তা দিয়ে থাকেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রাজনীতিতে এই দিনটিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবই দেখে রাজনৈতিক মহল। বাম জমানায় বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার উত্থানের পিছনেও ২১ জুলাই অন্যতম। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?

২১ জুলাই কী ঘটেছিল?
সাল ১৯৯৩। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। তখন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ‘আগুনে নেত্রী’ তথা সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে জ্যোতি বসুর সরকার। এ সময় সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিং-এর অভিযোগ নিয়মিত শোনা যায় বিরোধিদের মুখে। এমন আবহেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচি দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু সে বছর ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের জন্য কর্মসূচি পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার ডাকে মহাকরণ অভিযানের জন্য কলকাতার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার যুবকংগ্রেসকর্মী। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক সচিবালয়ে এই অভিযান রুখতে তৎপর হয় পুলিশ। বিভিন্ন ক্রসিং-এ গড়া হয় ব্যারিকেড। এরপরই হঠাৎ চলতে থাকে গুলি। সেই গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুবকংগ্রেস কর্মী। এই ‘শহিদ’রা হলেন- বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেক, ইনু। এই ১৩ যুবকংগ্রেসকর্মীর মৃত্যুতে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কার নির্দেশে গুলি চালাল পুলিশ, এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। উল্লেখ্য, সেসময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে পরবর্তীকালে এ ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্নিনচিট দেয় সিবিআই।

১৯৯৩ সালের এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। পরবর্তীকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন এবং ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবসে’র মর্যাদা দেওয়া হয়। আজও এই দিনে পৃথকভাবে সমাবেশ করে কংগ্রে। কিন্তু, তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে এ রাজ্যে প্রশ্নাতীতভাবে বৃহত্তর শক্তি হয়ে ওঠায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

‘শহিদ তর্পণ’ করা হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে, বিশেষত রাজ্যে পালাবদলের পর ২১ জুলাই তৃণমূলের কাছে এক প্রকার ক্ষমতা প্রদর্শণের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপির বেনজির সাফল্য রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের। পরবর্তীতে বিধানসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে মা মাটি মানুষের সরকার। এবার লক্ষ্য ২৪ এর নির্বাচন, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর রূপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে মরিয়া বিরোধী শিবির গুলিও। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরাও। বিজেপি বিরোধী আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে এবারের একুশে জুলাই বিরাট মাত্রা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য ভার্চুয়ালি পালিত হয়েছে এই একুশে জুলাই। এবছর সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে ধর্মতলার রাস্তায়। বিভাজনের রাজনীতিতে উত্তরবঙ্গকে তখন উস্কি দিচ্ছে বিরোধী শিবির, সেই সময় এবার উত্তরবঙ্গ থেকেই রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ধর্মতলায় উপস্থিত হতে চলেছে। লক্ষ্য দিদির বার্তা! তাই ২০২২ সালের ২১ শে জুলাই এক অন্য মাত্রা নিবে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

More News

Recent Comments