ময়নাগুড়ি, ২৩ মার্চ : শিক্ষকদের বদলি আটকাতে অভিভাবক সহ ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষোভে সামিল হলো বুধবার। এদিন ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের চ্যাংমারী হরেন্দ্রনাথ হাই স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের তালা বন্দি করে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র ছাত্রীরা। এমনকি তাদের জন্য রান্না করা মিড ডে মিল পর্যন্ত না খেয়ে এই বিক্ষোভে সামিল হন এলাকাবাসী সহ পড়ুয়ারা। ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শেষ প্রান্তে অবস্থিত চ্যাংমারী হরেন্দ্রনাথ হাই স্কুল। সেই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক ছিলেন ১১ জন এবং ছাত্র ছাত্রী প্রায় ৮০০ জন। এই অবস্থায় প্রধান শিক্ষিকা সহ চার জন স্কুল থেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এদিকে ছাত্র ছাত্রী অনুপাতে শিক্ষক শিক্ষিকা নেই। তারই মাঝে বুধবার দুই শিক্ষক গৌতম দাস ও রাঘবানন্দ বর্মন নামে তারাও বদলি নেওয়ার শেষ পর্যায়ে এসেছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিক্ষোভে সামিল হন অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রীরা। তারা এদিন স্কুলে আগত শিক্ষক শিক্ষিকাদের তালা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল থাকার কারণে শিক্ষক শিক্ষিকারা এই স্কুল থেকে বদলি নিয়ে নিচ্ছেন।কিন্তূ স্কুলে নতুন কোনো শিক্ষক শিক্ষিকারা আসছেন না । ফলে এই অবস্থায় স্কুলের পঠন পাঠন ও ছাত্রদের ভবিষ্যৎ কি হবে তাই নিয়েই উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। এক অভিভাবক আলিউল ইসলাম বলেন, " শিক্ষকরা তাদের সুবিধা মতো স্কুল থেকে বদলি নিয়ে নিচ্ছেন। তার বদলে কোনো শিক্ষক এই স্কুলে আসছেন না ফলে ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কি হবে। মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীরা কি করবেন। তাই আমরা এখানে এই বদলি আটকাতে এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।" দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী খুঁকি দাস বলেন, " আমাদের স্কুলের ১১ জন শিক্ষক ছিলেন। তার মধ্যে চারজন শিক্ষক বদলি নিয়েছেন। আবার দুই শিক্ষক বদলি নেবেন জানতে পেরেছি। এই অবস্থায় আমাদের পড়াশোনা কিভাবে হবে তা বুঝতে পারছি না তাই বিক্ষোভে সামিল হয়েছি।" একই কথা বলেন দশম শ্রেণীর আরেক পড়ুয়া মহম্মদ সোহেল। অন্যদিকে স্কুল শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকা সহ চার শিক্ষক গত ১৬ তারিখ স্কুল থেকে বদলি নিয়ে নেন। কিন্তূ এরপর কোনো শিক্ষককে দায়িত্বে রেখে যাননি। সেই দিন থেকে দায়িত্বে কোনো দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় স্কুল এভাবেই চলছে। সবাই সবার সুবিধা মতো রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী পোর্টালে বদলির জন্য আবেদন করেছেন । এমনকি সুযোগ পেলে তারা তার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছেন। ফলে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। এই বিষয়ে স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা কোয়েলি রায় বর্মন বলেন, "আমি গত ১৬ তারিখ স্কুল থেকে রিলিজ নিয়েছি। এমনকি সমস্ত দায়িত্ব স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এই বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।" এই বিষয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি দিগেন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, " আমরা পরিচালন সমিতির সদস্যরা এবং অভিভাবকরা মিলে স্কুল পরিদর্শক, জেলা শাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানালাম। যাতে এইভাবে গ্রামের স্কুল থেকে শিক্ষকরা বদলি হতে না পারেন।" এই বিষয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, " বিষয়টি আজকেই আমি জানতে পারলাম সভাপতির কাছ থেকে। ওনাকে দ্রুত মিটিং করে স্কুলে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার কথা জানালাম। এখন রাজ্য সরকারের পোর্টাল রয়েছে। অনেকেই মেডিক্যাল দেখাচ্ছেন ফলে আমাদের কিছু করার থাকে না। যে দুজন শিক্ষক আবেদন করেছেন তাদের এখনো প্রক্রিয়া চলছে। আমরা দেখছি তারা কিভাবে আবেদন করলেন এবং তা বৈধ কি না। বৈধ না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক, পর পর চলছে শিক্ষক বদলি, বিক্ষোভে পড়ুয়া সহ অভিভাবকরা
RELATED ARTICLES