‘মমতার আঁচলের ছায়ায় বড়,’ নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের

কলকাতা ব্যুরো : রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে তিনি রাজনীতি শিখবেন না। নাম না করে এই ভাবেই কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনে উপস্থিত থেকেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। এই নিয়ে গতকালই নাম না করে কটাক্ষ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন দিঘায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

এদিন তিনি বলেন, যাঁরা এতদিন ‘মমতার আঁচলের ছায়ায়’ বড় হয়ে এখন বিজেপিতে করে খেতে এসেছেন, তাঁদের কাছ থেকে তিনি রাজনীতি শিখবেন না। স্পষ্টই নাম না করে তিনি শুভেন্দু অধিকারীকেই খোঁচা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, তাঁর দলের নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌজন্যবোধের কথা।

বুধবার অক্ষয়তৃতীয়ার দিন দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিরোধী দল থেকে একমাত্র দিলীপ ঘোষই সস্ত্রীক দিঘাতে উপস্থিত ছিলেন। যা নিয়ে পরে বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতারা কটাক্ষ করেছিলেন। যার মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা-সহ অনেকে।

গতকালই কাঁথিতে ‘সনাতনী সমাবেশ’-এ উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দিলীপ ঘোষের দিঘায় যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, কারও ‘ব্যক্তিগত’ বিষয় নিয়ে তিনি কিছু বলতে চান না। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নাম না করে দিলীপ ঘোষের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত বিষয়, কাজের ধরন, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, রাগ-বিরহ এই সবের উত্তর আমি দিই না। ভবিষ্যতেও দেব না।’ কিছু দিন আগেই দিলীপ ঘোষের বিয়ে উপলক্ষ্যে ঠিক একই সুরে কথা বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

এবার নাম না করে সেই কটাক্ষেরই উত্তর দিলেন দিলীপ ঘোষ। এদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে দিঘায় তিনি বলেন, ‘কারা বড় বড় কথা বলছেন? যাঁরা এতদিন মমতা আঁচলের নীচে থেকে নেতা হয়েছেন। যাঁরা এতদিন কালীঘাটের উচ্ছিস্ট খেয়ে বড় হয়েছে, এখন বিজেপির উচ্ছিস্ট খাচ্ছেন, তাঁরা চরিত্রের কথা বলছেন। আর এখন তাঁদের কাছ থেকেই দিলীপ ঘোষকে ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট নিতে হবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেই দল করি, যে দলের নেতা ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীজি। যিনি একসময় কালীঘাটে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন। যদিও সেই সময় মমতা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আর এখন শত্রু হয়েছেন বলেও মনে করি না।’ পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিলেন, সৌজন্য দেখালেও প্রয়োজনে রাজনৈতিক কারণে ‘প্রত্যাঘাত’ করতে তিনি পিছপা হবেন না।

এই প্রসঙ্গেই তিনি মনে করিয়ে দিলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর বাসে চেপে ‘শত্রু দেশ’ পাকিস্তানে যাওয়ার ঘটনাকে। আর সেখান থেকে তাঁর ফিরে আসার পরপরই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে ছিল। তাঁর কথায়, বাজপেয়ীজি কিন্তু সীমান্তে সেনা পাঠাতে ভয় পাননি। যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। তেমনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৎকালীন পাকপ্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নাতনির বিয়েতে গিয়েছিলেন। আবার প্রয়োজনে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করতে ভয় পাননি। তিনি মনে করেন, রাজনীতিতে সৌজন্যবোধ থাকবে।

তবে এদিন একটা বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যতদিন তিনি রাজনীতিতে থাকবেন, ততদিন বিজেপির সঙ্গেই যুক্ত থাকবেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করছেন আমি পার্টি ছাড়লে তাঁদের সুবিধা হবে। তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। পশ্চিমবঙ্গে যতদিন না পর্যন্ত পালাবদল হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত রাজ্যে আমার লড়াই চলবে।’ তাঁর কথায়, দলের লড়াইয়ে তিনি রাস্তায় ছিলেন, এবং আগামী দিনেও থাকবেন।

এদিন একই সঙ্গে নাম না করে দলের রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং সৌমিত্র খাঁকেও তিনি কটাক্ষ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই যে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দল সব থেকে বেশি আসন পেয়েছিল, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তেমনি সৌমিত্র খাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা চারটে বিয়ে করেন, ১৪টা গার্লফ্রেন্ড রাখেন, যাদের দিনের জীবন এক, আর রাতের জীবন অন্যরকম, তারা দিলীপ ঘোষকে ত্যাগী-ভোগী বলছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *